গল্প:সিনিয়ার বউ #পর্ব:১

 #গল্প:সিনিয়ার বউ

   #পর্ব:১

      #alonelife


কিছুদিন বেড়াতে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে শুনি আজ নাকি আমার বিয়ে। 


সেটাও আবার আমার চাচাতো বোন তিসা আপুর সাথে। বয়সে সে গুনেগুনে আমার চেয়ে ৫ বছরের বড় ।তাকে সবসময় বড় বোনের নজরেই দেখে এসেছি😌


গ্রামের বড় হওয়া সহজ সরল ও লাজুক স্বভাবের ছেলে আমি। আমার চাচা তার পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন। তিনি সরকারি উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা। তাদের সাথে আমাদের মানায় না। উনারা বাড়িতে আসলে আমি ঘর থেকে বের হতাম না। ভয় ও লজ্জায়। আসলে তারা শহুরে ভাষায় অনেক সুন্দর করে কথা বলতো আর আমরা তো গ্রামের ভাষাতেই কথা বলতে অভ্যস্ত। তাই সংকোচ লাগতো কি বলতে যে কি বলে ফেলি। 


তাদের বেশভূষা অনেক উন্নত কিন্তু আমাদের বেশভূষা তাদের মতো ছিল না। সব মিলিয়ে নিজেকে মনে হতো আমি তাদের কোনো দিক দিয়েই যোগ্য না।আর তিসা আপু,,তাকে দেখলে দশ হাত দূরে থাকতাম। তাকে দেখে কেনোজানি মনে হতো সে অনেক রাগী। আমার সাথে কথা খুবই কম বলতেন। কখনো কখনো দেখা হলেও কথা বলতেন না। আমিও অপমানে লজ্জায় কথা বলতাম না🙈🙈

.

.

সবার সাথেই কথা বলেন হেসে হেসে আর আমার বেলায় এসেই মুখটা গোমড়া করেন। আমি রুমে এসে আয়নার সামনে দারিয়ে নিজেকে দেখতাম। আমার ভিতর কমতি কি, সেটা দেখার জন্য। আপু কেন কথা বললেন না আমার সাথে। এসব ভেবে খুবই কষ্ট পেতাম। উনার সাথে কথা বলতে খুবই ইচ্ছে করতো। কিন্তু বলতে গেলেই কিসের যেন জড়তা এসে মুখে ভিড় জমাতো।

.

.

তিসা আপু দেখতে কিন্তু পরীর মতোই সুন্দর। পরী বললে হয়তো ভুল হবে, আমার কাছে তার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগে। আমি তো পরী দেখিনি, তবে সবাই বলে পরি নাকি অনেক । এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। উনার সাথে বিয়ের কথা শুনে আমার হাত পা ভয়ে জমে এলো। সে নাকি আমার বউ হবে, ভাবতেই গা শিউরে উঠলো😧😧

.

.

আমি আবির মাহমুদ। এবার ইন্টার ২য় বর্ষ। আমার বাসা চাঁপাই নবাবগঞ্জ। আর তিসা আপু মাস্টার্সে। তাদের বাসা রাজশাহী। আমি তার যোগ্য নই। সে আমার থেকে শত ভালো ছেলে ডির্জাব করে। তাও বিয়ে ব্যাপারটা ঠিক বুজতে পারলাম না। আম্মুকে ডাকলাম আর বললাম...

.

.

-- আম্মু এসব কি শুনছি আমি😠😠

.

-- আমাকে এসব বলিস না। তোর বাবাকে গিয়ে বল। আমি বলতে গিয়েছিলাম একটা বুড়ি মেয়ের সাথে আমার ছোট ছেলের বিয়ে দেই কিভাবে ?

.

-- বাবা কি বললো?

.

-- আমার কথা শুনে সে বলে তোমাকে বিয়ে দিতে কে বলেছে। এসব বিষয়ে দেওয়ানগিরী করতে এসো না। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছো নিজের ইচ্ছায় দেখো তার পরিণতি কি হচ্ছে। এখন সারাজীবন মেয়ের কষ্টমাখা মুখ দেখতে হবে।

.

-- তুমি কিছু বলনি। 

.

-- আমি তো তোর বাবার এই একটা কথাতেই থেমে গেলাম। আর কিই বা বলতাম আমি বল,, (আম্মু)

.

-- তাই বলে আমাকে আমার থেকে বয়সে বড় মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে ? তুমি কিছুই করতে পারবেনা আম্মু ( আম্মুর হাত ধরে বললাম)

.

-- না,, তুই গিয়ে তোর বাবাকে বল। এই সম্পর্ক তোকে সারাজীবনভর বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। জীবনটা তোর। অন্য কারো না। তাই দেরি না করে তোর বাবাকে বল আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। তারপরের টা পরে দেখা যাবে। 

.

.

আমি কিন্তু আব্বুকে জমের মতোই ভয় পাই। আবার অনেক ভালোবাসি। বাবা বুঝি আমাদের কথোপকথন শুনতে পেয়েছে। তাই তিনি গলা হাসা দিয়ে ভিতরে ঢুকলেন😮😮

আমিও ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলাম। আব্বু এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন....

.

.

-- তোমার মতামত না নিয়েই আমি অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

.

(এরপর বাবা আমার হাত দুটি তার হাতের মাঝে রেখে বললেন.....)

.

-- আমাকে ফিরিয়ে দিওনা। আজ এক পিতা তার সন্তানের কাছে পিতা হওয়ার অধিকার নিয়ে কিছু চাইতে এসেছে। তুমি কি আমার সে চাওয়াকে সম্মান করতে পারবে ? 

.

-- তাই বলে বয়সে বড় মেয়েকে। আর এখন বিয়ে😐😐 

.

-- আমি কি তোমার জন্য এমন সিধান্ত নিয়েছি যে যাতে তোমার খারাপ হতে পারে। আর ২-৩ বছর পরে বিয়েতো করতেই হবে। আগে করলে সমস্যা কি?

.

.

আমার কাছে এর আর কোন যুক্তি নেই। তাই রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নেই😢😢

.

.

-- আপনি যেমন চাইবেন তেমনি হবে। 

.

.

এর বেশি কিছু বলতে পারলাম না। ভয়ে নাকি ভালোবাসার কারনে বুঝতেও পারলাম না। বাবা বললেন তিসা অনেক ভালো মেয়ে।😌😌 


আমি মনে মনে বললাম তোমার কাছে তো ভালো হবেই। কারন সে যে তোমাকে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু আমাকে ? আমাকে তো করেনা😞😞


যখন বিয়ে বাড়িতে পোছালাম তখন দেখলাম মাত্র কয়েক জন মানুষ। বাড়ি সাজানো হয় নি। আমার সব স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল😧😧


আমি এইভাবে বিয়ে করতে চাই নি। বড় করে অনুষ্ঠান করে বন্ধুদের নিয়ে করতে চেয়ে ছিলাম। একে বারে সাদা মাঠা ভাবে বিয়েটা হলো।

.

.

চাচিকে দেখলাম কেমন যেন মুখ করে আছে। সম্ভত উনার এই বিয়েতে মত নেই। না থাকারি কথা আমার মতো বেকার অযোগ্য ছেলের সাথে কোন মা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইবে না। কিন্তু বাবা-চাচা অনেক খুশি। এখন চিন্তার বিষয় হলো তিসা কি বিয়ে মানবে নাকি না । বাবা আর চাচা বিয়েটা কেন দিচ্ছে। যদি তিসা পরে না মানে তখন তো সবাই কষ্ট পাবে😢😢


ওই দিকে সব কিছু শেষ করে বাড়ি ফিরলাম।

তারপর.......


আমি বাইরে দাড়িয়ে আছি ভিতরে যেতে ভয় পাচ্ছি। ভেবে পাচ্ছিনা কি করবো। কারন আজ পযর্ন্ত যার সাথে ভালোবাবে কথা বলনি আজ সে আমার বউ। এমনিতে তিসা অনেক রাগি😠😠


তারপরেও অনেক সাহস নিয়ে ভিতরে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখলাম তিসা বিছানায় বসে আছে। কথা বলার সাহস হলো না,, কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছিলাম না। 

.

.

ঘোমটা সরিয়ে বলল


-- তুমি এসে গেছ। (তিসা)


-- হ্যা। (আমি)


-- আমি জানি তুমি আমাকে মেনে নিতে পারো নি। কারন আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। আমি তোমার থেকে কোনদিন কোন প্রকার অধিকার চাইবো না। কিন্তু বাবা, আর চাচু যেন বুজতে না পারে তাহলে তারা অনেক কষ্ট পাবো। তুমি শুয়ে পড়ো😴😴


-- আচ্ছা।

.

.

এটা ঠিক আমি মেনে নিতে পারছি না। কারন তিসার সাথে আমার বয়সের পাথক্যটা ৫ বছর। যা অনেক বেশি। যা কোন ছেলে সহজে হয়তো মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার সাথে বিয়ে হয়ে শুধু তিসার জীবন নষ্ট হয়ে গেল। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম😴😴

[সকালে...🌞🌞]


কে যেন মনে হচ্ছে ডাকছে। তাই....


-- মা যাওতো এখন ডেকো না। (আমি)


-- আমি তিসা।


নামটা শুনে তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম। পরে মনে হলো কাল তো আমার বিয়ে হয়েছে। ভুলেই গিয়েছিলাম।


-- কি হলো? বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে ফ্রেস হয়ে নাও। (তিসা)


-- আচ্ছা যান আমি আসছি।


-- প্লিজ সবার সামনে আপনি করে বলো না।


-- আচ্ছা।


-- মনে থাকে যেন,, আর সব সময় তুমি করে বল। কারন তুমি যেমন কখন যে আপনি করে বলে ফেল এতে সবাই সন্দেহ করবে।


-- আচ্ছা যাও!


- এত তো,, তাড়াতাড়ি আসবে।


তিসা বাইরে চলে গেল। কিছু সময় পরে আমিও বাইরে গেলাম। বাইরে গিয়ে দেখি বাবা আর চাচা বসে গল্প করছে। এত সকালে চাচাও এসে পড়েছে। বাড়িতে মেহমান নেই। কারন বিয়ে বেপারে বাড়ির লোক ছাড়া আর কেউ জানে না। আমার বন্ধুরাও না। ওদের বলা যাবেনা। বললে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। বাবার কাছে গেলাম।


-- শুন আবির,, রেডি হয়ে নাও তোর চাচু তোদের নিতে এসেছে।(বাবা)


-- আচ্ছা,, কখন যাবে?? (আমি)


-- কিছুক্ষন পরেই(বাবা)


আমি বসে বাবা আর চাচুর গল্প শুনছিলাম। কিছু সময় পর তিসা চা নিয়ে আসলো। বাবা আর চাচাকে চা দিল। আর আমি মার কাছে গেলাম।


-- মা কি করছো?? (আমি)


-- কি আর করবো,, তোর বাবা তোর জীবনটা নষ্ট করে দিল। বয়সে এত বড় মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে। (মা)


-- মা বিয়ে তো সব উপর ওয়ালা ঠিক করেছে। যার সাথে হবার তার সাথেই হবে এটা কেউ তো আটকাতে পারবে না।


-- তাই বলে এত বড় মেয়ের সাথে।


মাকে কিছু বলতে যাবো তখন পিছনে খেয়াল করে দেখি তিসা দাড়িয়ে। ওর চোখ টলমল করছে। হয়তো মায়ের কথা শুনেছে। ও তাড়াতাড়ি ওইখান থেকে সরে গেল। আমিও ও পিছনে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি তিসা কাদছে। হয়তো মার কথায় কষ্ট পেয়েছে😢😢


-- মায়ের কথায় কিছু মনে করবেন না। আসলে.... (আমি)


-- না,, আমি কিছু মনে করে নি। চাচি তো ঠিকি বলেছে। আমি তোমার জীবন নষ্ট করে দিলাম। (তিসা)


-- মা আসলে বাবার উপরে রেগে আছে তাই এই সব কথা বলেছে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।


-- হুম...!!


-- ও আজ তো আবার আপনাদের বাড়ি যেতে হবে।


-- আচ্ছা,..!!


আমি বাড়ির বাইরে গেলাম। বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। কিন্তু ওদের বলা যাবে না আমি বিয়ে করেছি। এটা শুনে ওরা টিট চাইবে। আর যদি জানতে পারে আমার বউ আমার থেকে বয়সে বড় তাহলে আরো পচাঁবে। আমাদের আড্ডা দেওয়ার জায়গায় চলে গেলাম। ওইখানে আমার বন্ধু রিফাত আর আকাশ ওয়েট করছে। ওই খানে পৌছাতেই....


-- কিরে তোর খবর কি?? কাল বাড়ি ফেরার পর থেকে তোকে পাওয়াই যাচ্ছে না। (রিফাত)


-- আসলে খুব ক্লান্ত ছিলাম,, তাই। (আমি)


-- ক্লান্ত তো আমরাও ছিলাম। তাই বলে আর দেখা করবি না,, আর তোর ফোনটাও বন্ধ। (আকাশ)


-- সরি রে..!!


-- আমরা তো মনে করেছিলাম তুই হয়ত বেচেই নেই। তাই তো তোকে দেখতে যেতে ছিলাম তার আগে তুই এসে গেলি। (রিফাত)


-- মনে মনে (যাক বাড়ি না গিয়ে ভালোই হয়েছে না হলে সব জেনে যেত)  তোরা আমাকে এত মিস করছিলি। (আমি)


 -- (হাসতে হাসতে) আরে না,, তুই মরলে তো তোর বাড়িতে মৃত্যু বার্ষিকিতে ভালো মতো খাওয়া যেত। তাই সিওর হতে যেতাম তুই মরেছিস কি না😂😂

( আকাশ)


-- তোরা বন্ধু না আর কিছু,, আমি মরে গেলে তোদের সমস্যা নেই,, তোরা আছিস ভালো-মন্দ খাওয়া নিয়ে। দাড়া আজ তোদের আমি মারবো। (আমি)


একটা লাঠি হাতের কাছে পেয়ে যখন ওদের কিছু বলবো শয়তান় দুটো পালিয়ে গেছে। এই বেস্ট-ফ্রেন্ড গুলো এমনি হয়। একবার আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। ওরা আমাকে দেখতে গিয়ে ছিল। সেখানে গিয়ে আমি কেমন আছি না জিঙ্গাসা করে বলে নার্স গুলো কেমন দেখতে। এদের জন্য মনে হয় দুনিয়া ছেড়ে দেই। আজ আর আড্ডা দেওয়া হলো না। তাই কি করবো তাই ভাবছিলাম। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। নাম্বারটা দেখেই বারটা বেজে গেল। 


মনে মনে ভাবছি এই ফোন কোন দিচ্ছে। ফোনটা ধরবো কিনা তাই ভাবছি। যদি না ধরি তাহলে এক সমস্যা হবে আর ধরলে আরেক সমস্যা। কি করবো তাই ভাবছি। শেষে ভাবলাম ফোনটা ধরি। যা হবার পরে দেখা যাবে। ফোনটা ধরতেই ও পাশ থেকে বললো.....


-- আবির একটা বড় সমস্যা হয়ে গেছে।


-- কি হয়েছে??


-- আসলে.......!!


চলবে......


No comments