আজ নতুন যারা মা হবেন বা হতে চলেছেন তাদের জন্য কিছু কথা

 আজ নতুন যারা মা হবেন বা হতে চলেছেন তাদের জন্য কিছু  কথা বলি এগুলো একান্তই আমার গবেষণা সেগুলোই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি-

রহমান এলিন শেখ 



২০১৫ সালের বিয়ের ৩ মাস পর ৫ মে জানতে পারলাম আমি হতে চলেছি।  ২৩ বছর বয়সী একটা মেয়ে হিসেবে  সত্যি এটি আমার মনে  অদ্ভুদ- মিশ্র একটা অনুভুতির জন্ম দিয়েছিল । 


সেই সঙ্গে আমি একজন  সাংবাদিক,একটি জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছি। নতুন সংসার। আবার অফিস শেষে এম বিএ এর ক্লাস সবে মাত্র শুরু করেছি। আমার পলান ছিল সব কিছু গুছিয়ে তবেই বেবি নেব। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন আল্লাহ তিনি যা চাইবেন তা হবে। তাই সন্তানকে আল্লাহর গিফট হিসেবেই গ্রহন করি।


১. পোশাকঃ বাবু পেটে আসার পর  থেকে নিজেকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে ফেললাম। এটা খুবই চ্যালেনজিং ছিল। কারন আমি ভীষন ফ্যাশন সচেতন মেয়ে।  যে আমি সব সময় পেশাগত প্রয়োজনে আটসাটে পোশাক পরতাম সে আমিই সন্তানের কল্যানের জন্য ঢিলেঢালা কামিজ পরিধান শুরু করলাম। 

কারন যাতে শরীরে সহজে শ্বাস ও বাতাস চলাচল করতে পারে। এ সময়টা গুড অক্সিজেন বাচ্চার জন্য খুবই দরকারি। মা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেই  শিশু সুস্থ থাকবে। 


২. মেকাপঃ নামি দামি রং উজজল করে বা দেখাতে সাহায্যে করে এমন সব মেক্যাপ দেয়া বন্ধ করে দিলাম। এগুলোর মধ্যে মেক্সিমাম উপাদান (এ)  রক্তে মিশে অনাগত শিশুর রক্তে প্রবেশ করে যা ভীষণ  ক্ষতিকর অনেক সময় মিসক্যারেজ বা সন্তান জন্ম নিলেও ক্যামিকেলের প্রভাবে প্রতিবন্ধী পর্যনত হতে পরে। তাই অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতাম। রেগুলার ক্যামিক্যাল প্রসাধনী দূরে থেকে সেই সঙ্গে  হরমোন্যাল চেনজ চেহারা হয়েছিল দারুন বাজে। নিজের চেহেরার এমতাবস্থায় দেখে ভীষণ মন খারাপ হতো।  অনেকে দেখে বলতো মুখে কিছু মাখতে পারো না? আমি বলতাম, বেবির স্নায়ুতে নানা ক্ষতি হয় এসব মাখলে। কেউ বুঝতো কেউ বুঝতো না।  শান্তনা ছিল এই টুকুই কয়লা থেকে হিড়ার জন্ম   হবে ইনশাআল্লাহ।  ক্যামিক্যাল ল মুক্ত কসমেটিকের উপর বিশ্বাস ছিল না কারন বাংলাদেশে তো খাবরেই ভেজাল দেয়। সেদিক থেকে কসমেটিক কি দেয় কে জানে!!! 


৩. খাওয়াঃ ডায়েটকন্ট্রোল বাদ দিলাম, বেশী বেশী দেশী ফল খাওয়া (যেগুলোতে ফরমালিন থাকার সম্ভবনা তুলনামূলক কম (যেমন পেয়ারা,আমড়া,কাচা আম আমলকি ইত্যাদি আনারস বাদে), শবজী রুচি অনুযায়ী  খেতাম।  শাকটা বেশী খেতাম। ভাত,রুটি, পরোটা,মাছ ও মাংশ রুচিমতো।  এর ফলে ওজনটাও একটু বেড়ে গিয়েছিলো। আর পানি বেশী না খেলেও ২ লিটার মিনিমাম খেতাম।  


৪ চলাফেরাঃ বাসা থেকে অফিস ৪৫ মিনিটের দূরত্বে প্রথম ৭ মাস পুরোটাই হেঁটে যেতাম এরপর পেট বড় হওয়ার পর মিনিমাম ২৫ মিনিট তো হাটতামই। লিফট কম ব্যবহার করতা সিড়ি দিয়ে চলাফেরা করতাম। এই চলাফেরার কারনে শরীর আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ ছিলো যেমন শরীরে  পানি বা পায়ে পানি আসেনি একদমই। আমি ১৭-১৮ বয়স থেকে  জিমে গিয়ে ওয়েটলস ও ফিটনেস এক্সারসাইজ করার অভ্যাস।  তাই এসময়টাতে সে অভ্যাস ত্যাগ করতে পারিনি।  সে কারনে মানসিক শান্তির জন্য কখনো কখনো একদম সহজ বেরেথিং ইয়োগা ও হালকা  ফ্রী হ্যানড এক্সারসাইজ করতাম(পেট বাদে)


৫ নামাজ কালামঃ অফিস থেকে ফিরে নামাজ পড়ে ইউটিউবে কোরান তেলওয়াত শুনতাম এটা রীতিমতো রুটিন ছিলো। কিছু দোয়া আছে বেবি পেটে থাকলে শুনলে ভালো সেগুলো বেশী বেশী শুনতাম। 

আর বেবি পেটে থাকতেই অাযান খুব পছন্দ  করতো। আর এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম,কারন সারাদিন পেটের মধ্যে ওর মুভমেন্ট টের পেতাম না দুশ্চিন্তা হতো। কিন্তু হটাত করে খেয়াল করলাম আযান কানে গেলে সে খুব সুন্দর  মুভ করতে থাকে! এরপর আযান মনোযোগ দিয়ে শোনাও আমার ডিউটি হয়ে গেল। আর ওর জন্ম হয়েছে মাগরিব এর আযান  দেয়ার সময়। তাই সব ভেবে  ওর ডাক নাম দিয়ে দিলাম আযান। 😇 


৬টিভিঃ বাবু পেটে নিয়ে অফিস করছি টানা ৯ মাস। যাতে হওয়ার পরে মাতৃকালীন ছুটিটা ওর সঙ্গে কাটাতে পারি। তাই অফিসের কারনে টিভি দেখা খুব একটা হতো না। আর দেখলে গঠনমূলক জিনিস বেশী দেখতাম। অদ্ভুদ প্রানী এসব জিনিস সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতাম।  


ঘরে ছবিঃ ঘরে বাবুর কোন ছবি টাঙানো হয়নি। কারন এতে ফেরসতা প্রবেশ করে না।  তবে রাস্তা ঘাটে আশে বাবু দেখলে আদর করার চেষ্টা করতাম। গরীব বাচচাদের সাহায্য করতাম, এখনো করি। এতে অদ্ভুত মানসিক শান্তি আসে। করন আমার কাছে  মনে  হয় "আমি কারো বাচচার জন্য কিছু করলে আল্লাহ আমার বাচ্চার জন্য করবেন। "


ফোনঃ কাছের কারো সঙ্গে কথা বলতে মন চাইলে   (মা,বাবা,ভাই বোন, খালা মামা ফুপু মামী ইত্যাদি) ফোনে কথা না বলে  সরাসরি বাসায় চলে যেতাম। 

আল্লাহর নাম নিয়ে ঘোরাঘুরি সবই করেছি। 

 সর্বপরি মন ভালো রাখার চেষ্টার কোন কমতি ছিলো না। সবই নিজের জন্য সন্তানের ভালোর জন্য নিজ উদ্দোগ্য করছি। কেউ করে দিবে আমি উপভোগ করবো সেটির অপেক্ষা করিনি। ফলশ্রুতিতে সবাই বলতো এমন প্রেগন্যান্ট মহিলা কমই দেখা যায়। এসব কথা আরো বেশী ভালো থাকার  উতসাহ পেতাম। 


এই বললাম বাবু পেটে আসার  পর আমার রুটিন। এর ফলাফল আর আল্লাহর রহমতে বেবি ছিল স্বাভাবিক ওজন (না কম না বেশী)। পেট থেকে কোন জন্ডিস /ঠান্ডা  নিয়ে পৃথিবীতে ল্যানড করে নি। সবকিছু নরমাল ছিল। ডাক্তার বলে ছিল এমন বাচ্চা কমই দেখা যায়, অনন্ত পেটের থেকে কম বেশী জন্ডিস/ঠান্ডা  নিয়ে মেক্সিমাম শিশুর আগমন ঘটে। 


আলহামদুলিল্লাহ এখনো অবদি আমার জান পাখিটার (৫ বছর ৪ মাস বয়স) জন্য কখনো ২০ টাকার ওষুধও কিনতে হয়নি। 


আযান মোটা একেবারেই না আলহামদুলিল্লাহ তারপরও দারুন চঞ্চল।মোটেও  ক্লান্ত হয় না বললেই চলে। এমনকি সামারে দূরে কোথাও ভ্রমনে গেলেও বেশ বড়দের মতো ফুরফুরে থাকে খাওয়া পেটে থাকুক আর না থাকুক। ওর সমবয়সী বন্ধু পাক আর না পাক সবাইকেই কথার জাদুতে   বন্ধু করে ফেলে 😇😉। এসব দেখে বুঝতে পারি আলহামদুলিল্লাহ ধরয্যও ভালো। 


আলহামদুলিল্লাহ   এখনি ৫টা ভাষা জানে ( বাংলা, ফ্রেঞ্চ,  ইংরেজি, সুইডিশও হিন্দি লিটল বিট) এই শেখার পেছনেও গল্প আছে সেটি না হয় অন্যকোন দিন বলবো।  সবাই আমার জানপাখিটার জন্য দোয়া করবেন

No comments