রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#বোনাস_পার্ট
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
কাজী অফিসে বসে আছি আমি আর কাব্য ভাইয়া৷ উনি আমার একহাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন৷ আমার কান্নার শব্দ গুলো উনার কান অবধি পৌঁছাতে পারছে কিনা সেই জানে৷ উনি অন্য হাতে তার চুল টেনে ধরে আছেন৷ চোখ গুলো রক্তলাল৷ হাত এতো শক্ত করে ধরেছেন মনে হচ্ছে এখুনি খুলে পড়ে যাবে৷ আমার মোচড়ামুচড়ি দেখে একবার আমার দিকে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই৷ উনাকে আগে এইভাবে রাগতে দেখি নি৷ ভয়ে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার৷ আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে একবার ঘড়ি দেখলেন আবার বাইরের দিকে তাকালেন৷ আফসোসের সুরে বললেন,
-- 'ড্যাম ইট!প্রয়োজনের সময় কাওকে পাওয়া যায় না৷'
সাদা পাঞ্জাবি,কালো টুপি সাথে মুখে দাড়ি আর পান খেতে খেতে একজন লোক চেয়ার টেনে বসতেই কাব্য ভাই নড়েচড়ে বসলেন৷ উনার হাবভাব দেখে কাজী লাগছে৷ উনাকে দেখে আমি এইবার জোরে কান্না করে দিলাম৷ শেষ আশাও আজ শেষ! কাজী দাত গুলো বের করে হে হে করে হেসে বললেন,
--'উঠিয়ে নিয়ে আসছেন নাকি ভাইজান?হয় এমন হয়!কতো করাইছি এমন বিয়া তার হিসাব নাই।তা আপনাগো সাক্ষী কই? আমার এইখানে মেলা সাক্ষী আছে লাগলে কন ডাইকা দেই৷'
--'স্টপ!আর একটা কথা বললে আপনার দাঁত ভেঙে গুড়িয়ে দিবো৷'
উনার ধমক শুনে কাজী সাহেব চুপ হয়ে গেলেন৷ আমি উনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
--'আপনি এখন বেশী বেশী করছেন কাব্য ভাই৷ তখন চুপ ছিলাম তবে আজ চুপ থাকবো না৷ আমি এইখান থেকে পুলিশের কাছে যাবো৷'
উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
--'যা তোকে মানা করেছে কে? অধিকারের কথা বলেছিলি না!এখন সত্যিকারে অধিকার নিবো তোর৷'
কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে আমার৷ এতোটা খারাপ কেন এই লোকটা৷ সব সময় আমার উপর জোর দেখায়৷ কাঁদার ফলে কোনো কথাই বলতে পারছি না৷ কিছুক্ষণ পর রাহুল ভাইয়া আর মোস্তাকিম ভাইয়া আসতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়৷ এইবার মনে হয় সত্যি সত্যি বিয়ে হয়েই যাবে। আমাকে কাঁদতে দেখে রাহুল ভাইয়া বললেন,
--'কাব্য ও কাঁদছে কেন এইভাবে?'
--'আমি মরে গেছি এইজন্য কেঁদে কেঁদে শোক পালন করছে৷'
রাহুল ভাইয়া ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন উনার কথা শুনে৷ মোস্তাকিম ভাইয়া কাকে যেন ফোন করলেন৷ শুধু বললেন,
--'জলদি আয় তোরা আমারা অপেক্ষা করছি৷'
কার আসার কথা বলছেন আর?সবাই তো এসেই গেছে৷ আল্লাহ বাচাও আমায়৷ একটু পর তমা আপু আসতেই কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়ায়৷
--'মাহিম আর তোদের ফ্যামিলির সবাই কোথায়?তোদের সকাল নয়টায় বের হতে বলেছিলাম৷'
কাব্য ভাইয়ের কথা শুনে একটা ছেলে আর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
--'এই যে আমি৷ আপনার ফ্রেন্ড বাসা থেকে বের হতে দু ঘন্টা লাগিয়েছে৷'
তার কথা শুনে তমা আপু উনার পেটে গুতা দিয়ে বললেন,
--'বেশি কথা বললে সোজা এইখানে থেকে বাসায় চলে যাবো৷'
তমা আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
--'এইটা নীতু না? ও কাদছে কেন এইভাবে!'
পাশে অনেক গুলো অচেনা মুখ আমার দিকে চেয়ে আছে৷ আমি কাব্য ভাইয়ার পিছনে আর একটু সরে দাড়ালাম৷ আমাকে হাত ধরে সামনে এনে বললেন,
--'নতুন বিয়ে করেছি তো তাই লজ্জায় তোদের দেখে কান্না করছে৷'
তমা আপুর ফ্যামিলি সাথে সবাই কাব্য ভাইয়ার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ একবার আমাকে দেখছেন আরেকবার তাকে। মোস্তাকিম আর রাহুল ভাইয়াও অবাক হয়েছেন৷ আমি উনার হাত নিজে থেকে খামচে ধরি৷ উনি আমার দিকে তাকিয়ে সবাইকে তাড়া দিয়ে বললেন,
--'আমাকে আসতে বলেছিলি এসেছি!এইবার জলদি বিয়ে কর আমায় যেতে হবে৷ তোদের প্যানপ্যানানির জন্য আমি আর নীতু না খেয়েই বেরিয়ে এসেছি৷'
উনার কথা শুনে সবাই বিয়ের দিকে মনোযোগ দেন৷ আমার আত্মায় পানি এসেছে এখন। তারমানে আজ তমা আপুর বিয়ে ছিলো। উনি আমাকে টেনে নিজের কাছে এনে নিচু হয়ে ফিসফিস করে বলেন,
--'আবার কাঁদা শুরু কর। কারণ ওদের পর তোর আমার আর তোর রেজিস্ট্রি হবে। ওয়েট এন্ড সি।'
---------------------------------
রৌদ্র তপ্ত দুপুরে আমি ঘেমে চিপচিপে হয়ে গেছি। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আমাকে নিয়ে পার্কে এসে বসেছেন উনি। গরমে জান যায় যায় অবস্থা। আর ড্রেসের দিকে তাকালে আরো কান্না পাচ্ছে আমার। শয়তান লোক একটা আমাকে ইচ্ছা করে ভয় দেখিয়েছে। তবে রাগ ছিলো অধিকার নিয়ে বলার জন্য। হুহ! রাগ আমারও আছে শুধু বের হয় না মিস্টার কাব্য। একদিন আমার রাগে আপনি ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন। উনি আমার এক বেঞ্চিতে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছেন। বিরক্ত লাগে! অসহ্য মানুষ একটা। কাব্য ভাইয়া হুট করে যেমন গিয়েছিলেন তেমন হুট করে এসে আমার কোলে মাথা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে আর বলেন,
--'বিরবির করে বকা হয়ে গেলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।'
আমি অবাকের শেষ চূড়ায় গিয়ে বসে আছি । একে তো পাবলিক প্লেস তার উপর আমার অনুমতি না নিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি উনার মাথা ঠেলে উঠিয়ে দেওয়ায় চেষ্টায় লেগে আছি। আর উনি মাথা ঘুরিয়ে আমার পেটে মুখ গুজে শুয়ে রইলেন। উনার গরম নিশ্বাস আমার উপর পড়ছে।অস্বস্তি তে আমার ভেতর কেঁপে উঠছে। আমার নড়াচড়া দেখে উনি নাক ঘষে বললেন,
--'সাইলেন্ট মুডে বসে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে। আর বেশি ভাইব্রেট করলে পাবলিক প্লেসে চুম্মা দিবো।আর আমি যা বলি তার থেকে বেশি করি।'
উনার কথা শুনে আমি একদম মূর্তির মতো বসে রইলাম। এই লোকের কাজ সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে। উনি এইবার মাথা উঠিয়ে বললেন,
--'হাত কি নেই তোর? চুল গুলো টেনে দে আমার। নিজে তো শান্তি মতো ঘুমাস আমার ঘুম হারাম করে। এখন আমায় ঘুমাতে দে না হলে...
আমি মনে মনে হাজার খানিক বকা দিয়ে উনার কথা মতো চুল টেনে দিতে থাকলাম। ইচ্ছা হচ্ছে সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। আস্ত একটা রাক্ষস কেও হার মানাবে এই ছেলে। উনি আবার বিরবির করে বললেন,
--'আমার অনাগত বাচ্চারা কেমন আছে রে নীতু?তাদের যত্নের হেরফের হলে তোকে উঠিয়ে ফেলে দিবো আমি।'
উনার নিশ্বাস ভারী হচ্ছে। ঘুমিয়ে গেলো। এইটুকু জায়গায় উনার মতো হাতির জায়গা হলো কি করে?হাও পসিবল!
টানা দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠেছেন মহাশয়। উঠেই এটিটিউড শুরু হয়ে গেছে উনার। আমার পা ব্যাথায় ভারী হয়ে গেছে। উনি উঠেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ লাগলো আমার। আমি দাঁড়াতে পারছি না উনার জন্য আর উনার কোনো হুশ নেই?
--'আমাকে কি আপনার চোখে পড়ে না। আমি উঠতে পারছি না আর আপনি নিজে একা একাই হেটে চলে যাচ্ছেন। এমন কেন আপনি?'
উনি আমার সামনে এসে কোনো কথা না বলেই কোলে উঠিয়ে নিলেন । আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরি। আর উনি দ্রু বাকা করে তাকিয়ে বললেন,
--'আজ থেকে কম খাবি তুই। দিনে দিনে হাতির বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে। আমার কোমর শেষ আল্লাহ! এর চেয়ে হাতি কোলে নিলেও হতো।'
উনার কথা শুনে রাগে আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এতো অসভ্য কেন উনি?ইচ্ছা হচ্ছে এখুনি কোলে থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ি।
গাড়িতে বসার পর আর একটাও কথা বলেন নি উনি । মুখ আবার গোমড়া করে গাড়ি চালাচ্ছেন । আর এমনটা হয়েছে একটা ফোন আসার পর থেকে। আমি রাগের জন্য কারণ জিজ্ঞেস না করেই বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। উনার যা ইচ্ছা হোক তাকে আমার কি? বাড়িতে পৌছে ফুঁপির থমথমে মুখ দেখে ভয় পেয়ে যাই। সাথে কাব্য ভাইয়াও মুখ ভার করে বাসায় ঢুকলেন। আমি উনার পিছে পিছে ড্রয়িং রুমে যেতেই ভয়ে কাব্য ভাইয়ের পিছে লুকাই। এতোটা সময় সব তো ঠিক ছিলো তাহলে এখন..........
চলবে....
(বোনাস পার্ট চাইছিলেন দিয়েছি অনেক কষ্টে।আপনারা সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন এই খুশীতে😶)
Post a Comment