তোমাতেই আমি

 তোমাতেই আমি

writer: প্রিয়া

জ্বরে গাঁ পুড়ে যাচ্ছে প্রভাতীর।বিভোর মাথার পাশেই বসা ছিলো উঠে গেলো কায়সার আহমেদে রুমে।

~আংকেল প্রভাতীর জ্বর তো খুব বেশী। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।


=আমি ডাক্তারকে ফোন করে দিয়েছি বাবা ডাক্তার সাহেব আসতেছেন।


রিক্তা মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে আর কান্না করছে।নিজের বোকামির জন্য মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।


কিছুক্ষণ পরেই ডাক্তার চলে আসেন।প্রভাতী কে চেকাপ করেন।

=জ্বর খুব বেশি মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছি কিছু খাইয়ে ওষুধ খাইয়াবেন।


রিক্তা তাড়াহুড়ো করে মেয়ের জন্য ভাত নিয়ে আসে।

~মা আমার সোনা মা এক লোকমা ভাত মুখে নে।ওষুধ খেতে হবে তো।


=আমি খাবো না মা বমি এসে যাবে।


বিভোর~বমি আসলে আসবে তা ও তোমায় খেতে হবে।হা করো, আন্টি আপনি ওর মুখে ভাত দিন।


প্রভাতী অনেক কষ্টে এক লোকমা ভাত মুখে নেয়।গিলতে পারে নি খাবারটা বমি করে দেয়।আবার সেই বিভোরের উপর বমি করে বিভোরের শার্ট নষ্ট করে দেয়।

~ইশ বাবা তোমার শার্ট নোংরা করে দিলো।


=সমস্যা নেই আন্টি। আপনি ওকে ওষুধ খাইয়ে দিন।


প্রভাতী আর কিছুই খাইনি।রিক্তা মেয়েকে ওষুধ খাইয়ে দেয়।

প্রভাতী আবার শুইয়ে থাকে।বিভোর ওয়াসরুমে গিয়ে শার্ট ধুইয়ে আসে কিছুক্ষণ প্রভাতীর পাশে বসে থাকে।


~আন্টি আমি তাহলে যাই।কাল এসে দেখে যাবো।জ্বর কমলে ওর শরীরটা মুছিয়ে দিবেন।


=আচ্ছা বাবা যাও।তুমি আজ যা করলে মেয়েটার জন্য কিভাবে যে ঋণ শোধ করবো।


~ছিঃ ছিঃ আন্টি এসব কি বলছেন। প্রভাতী তো আমার বোনের মতোই।


বিভোর বাসা থেকে বের হয়ে জোনাকি দের বাড়ির রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে নিজের বাড়ি যাচ্ছে।এদিক দিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য একনজর জোনাকিকে দেখা।

বাড়ির ছাদে বসে জোনাকি চাচাতো বোনদের সাথে কথা বলছে।রাস্তা থেকে ওদের দেখা যাচ্ছে।


সাদা ড্রেস খোলা চুলে অপরূপ লাগছে জোনাকি কে।একধ্যানে তাকিয়ে আছে বিভোর।


নিচের দিকে চোখ পড়তেই বিভোরকে দেখতে পেলো জোনাকি। দুজনের চোখাচোখি হতেই বিভোর লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে শুরু করলো।


বিভোরকে দেখে মুচকি হাসি দিচ্ছে জোনাকি।হাত দিয়ে ইশারা করলো নদীর ওই দিকটাই যাওয়ার জন্য।


বিভোর বুঝতে পেরে হাঁটা ধরলো।নদীর কিনারায় গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লো।

কিছুক্ষণ পর জোনাকি আসলো।ঘাসের উপর বসে।

~কি মশাই মিস করছিলেন না কি।


=এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ছাদে তোকে দেখে দাঁড়ালাম।


~তাই বুঝি।


=খোলা চুলে এলোকেশী, মায়াবী চাহনি, মুগ্ধ নয়নে দেখিয়া, পরাণ গেলো জুড়াইয়া।


~কবি হয়ে গেলে না কি তুই।


=তোর জন্য আমার মাঝেমাঝে কবি হতে মন চায়,আবার কখনো তোর জন্য পাগল হতে মন চায়।


~আরে পাগল-টাগল হোস না।


=আচ্ছা জোনাকি তুই কি সারাজীবন আমায় ভালোবাসবি।


~তোর কি মনে হয় আমি তোর সাথে ফাজলামি করতেছি।


=আরে রাগ করিস কেনো।এমনি বললাম।


~কি একটা নোংরা গন্ধ পাচ্ছি।আচ্ছা তোর শার্টে কিসের দাগ।


=আর বলিস না প্রভাতী আছে না আমার ছাত্রী ওর খুব জ্বর, জ্বরের ঘুরে আমার উপর বমি করে দেয়।


~ওয়াক।আর এই নোংরা শার্ট নিয়ে তুই বসে আছিস।তোর নাকে গন্ধ লাগতেছে না।


=বাড়িতে গিয়ে গোসল করে নিবো।


~দাঁড়া এখানে।


বিভোর উঠে দাঁড়ায়,জোনাকি বিভোর কে ধাক্কা দিয়ে

নদীতে ফেলে দেয়।


=তুই করলি কি এইটা।


~তোকে গোসল করিয়ে দিলাম।


=দাঁড়া তোর খবর আছে।


~আমি চললাম কোথায় পাবি আমায়।


বিভোর নদীতে সাঁতার কেঁটে পাড়ে উঠে আসে।জোনাকি দৌড়ে পালিয়ে যায়।


বিভোর বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।বাড়িতে ফিরে জামা পাল্টে শুয়ে পড়ে।শীতের সময় নদীর পানি বরফের মতোই ঠান্ডা থাকে আর এই কয়েকদিন থেকে প্রতিরাতে বিভোরের জ্বর আসে। এই বিকেলে নদীর পানিতে গোসল করার জন্য বিভোরের প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগে।

কম্বল গাঁয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।তবু যেনো ঠান্ডা কমছে না হাত পা পুরো বরফ হয়ে গেছে।

বিভোরের ছোট বোন চামেলি ওর রুমে আসে।


~ভাইয়া তোর কি হয়েছে।


=বোন আমার খুব ঠান্ডা লাগছে।এক কাপ চা করে দিতে পারবি।


~তুই ঘুমা আমি নিয়ে আসছি।


চামেলি চা বানাতে চুলায় আগুন ধরায়।


~সন্ধ্যের সময় তুই রান্না ঘরে কি করিস,পড়ালেখা নেই।


=মা পড়তে ছিলাম তো।খুব ঠান্ডা লাগছে তাই ভাবলাম গরম চা খাই। খেলে শরীর একটু গরম হবে।


~আমাকে ও এক কাপ চা দিস।আর ওই নবাবের ব্যাটা ঘরে আসলে ওরে ও এক কাপ চা দিস।


চামেলি বিভোরের জন্য চা বানালে ও মা কে বলেনি, ভেবেছে মা গালি দিবে।এবার মা নিজেই বলছে দেখে খুশি হলো।

বিভোরের জন্য চা নিয়ে যায়, গিয়ে দেখে বিভোরের শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে।


~মা কোথায় তুমি জলদি আসো।ভাইয়া কেমন জানি করছে।


সুলতানা বেগম তাড়াহুড়ো করে বিভোরের রুমে আসলেন।

~মা ভাইয়ার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আর ভাইয়া এভাবে কাঁপছে কেনো।


=তুই তাড়াতাড়ি গিয়ে আমার ঘর থেকে কম্বল নিয়ে আয়।

চামেলি আরেকটা কম্বল এনে ওর গায়ে দে।

তবুও যেনো বিভোরের কাঁপুনি বন্ধ হচ্ছে না।মুখ দিয়ে ফ্যানা বের হচ্ছে।

চামেলি হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে।


~চামেলি তুই জলদি তোর বাপরে নিয়ে আয়।


চামেলি ওর বাবাকে নিয়ে আসে।

গাড়ি ডডেকে ওরা দুজন মিলে বিভোরকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।


চামেলি কান্না করেই যাচ্ছে।ডক্টর চেকাপ করছে।


~আপনাদের ছেলের তো নিউমোনিয়া হয়েছে।


=এতো বড় ছেলের নিউমোনিয়া।


~আসলে নিউমোনিয়া যে কোনো বয়সের লোকদের হতে পারে।ছেলেটার বোধহয় বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর ছিলো।


=কই ডাক্তারবাবু ছেলে তো বলেনি ওর জ্বর।


~বোধহয় জ্বরকে গুরুত্ব দেয়নি তাই আপনাদের বলেনি।আমি ইঞ্জেকশন দিয়েছি কিছুক্ষণ পর জ্বর কমলে বাসায় নিয়ে যাবেন।


এরমধ্যে হাসপাতালে কায়সার সাহেব আসেন।প্রভাতীর জ্বর কমলে ও কিছু মুখে দিলে বারবার বমি হচ্ছে তাই ডাক্তারের সাথে দেখা করতে উনি আসেন।

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে কায়সার।ডাক্তার বিভোরকে দেখে চেম্বারে যায়।


~কি রে কায়সার তুই। তোর মেয়ের কি কমেনি।


=জ্বর কমে গেছে কিন্তু কিছু খাচ্ছে না বমি হয়ে যাচ্ছে।


~কাল ওকে নিয়ে হাসপাতালে আসিস তো রক্ত পরিক্ষা করতে হবে।এই দেখ বিকালে তোর বাসায় যে ছেলেটাকে দেখলাম তোর মেয়ের স্যার এই ছেলে এখন হাসপাতালে ভর্তি।নিউমোনিয়া হয়ে গেছে আজ তো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে মুখ দিয়ে ফ্যানা বের হয়ে গেছে।


=কি বলিস বিভোরের এই অবস্থা সকালে দেখলাম ছেলেটা সুস্থ আবার বিকালে বাসায় গেলো দিব্যি ভালো ছিলো।


~যতটুকু বুঝলাম ছেলেটার জ্বর বেশকিছুদিন  থেকে পরিবারের কাউকে বলেনি ওরা কিছুই জানেনা।অসুখ নিয়ে ঘাপলাতি করায় আজ বড় রোগ বাধিয়েছে।


=তুই প্রভাতীর জন্য ওষুধ লিখ।আমি বিভোরকে দেখে আসি।কত নাম্বার কেবিনে আছে।


~২০৬নাম্বার ওয়ার্ডে পাবি।


বিভোরের জন্য কায়সারের খুব খারাপ লাগছে।বিভোর শুয়ে আছে চোখগুলো ফুলে গেছে।

কায়সার সাহেবকে দেখে হাসার চেষ্টা করলো।

উনি গিয়ে বিভোরের পাশে চেয়ার টেনে বসলেন।


~অসুখবিসুখ নিয়ে ঘাপলাতি করতে নেই বাবা।আজ দেখো কি বিপদ টাই হতো।


=আংকেল কার কাছে বলবো অসুখের কথা কে শুনবে।


~তোমার মা নেই।


=থাকলে কি অসুখ হয়ছে বলতে হতো আংকেল মা নিজেই বুঝে যেতেন।


কায়সার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে।


~দেখো তোমার ছেলের কান্ড দেখো। কত বড় বিপদে ফেললো কোথা থেকে আসবে হাসপাতালের বিল আর কোথা থেকে আসবে ওর ওষুধের টাকা।


=চুপ করো তুমি,বিভোর কি ইচ্ছে করে অসুস্থ হয়ছে।আমার ছেলের ওষুধ আমি যোগাড় করবো।তুমি চিল্লাও কেন।


বিভোরের গাল বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।কায়সার সাহেব বিভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে গেলেন।


বিভোরের বাবা ওর মায়ের সাথে কথা বলে চলে গেলেন।দরজা খুলে কায়সার বের হতে সুলতানা ভিতরে আসতে দুজনেই দরজার মাঝে ধাক্কা খান।


কায়সার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার ধাক্কা খায়, 


~সুলতানা,


=ছোট সাহেব।


~সুলতানা তুমি এখানে এতোবছর পর।

তুমি কোথায় গিয়েছিলে।কেনোই বা আর ফিরে এলে না।


=ছোট সাহেব আমি ছিলাম আপনাদের বাড়ির কাজের লোক।কাজের লোকের খোঁজ নিয়ে আপনি কি করবেন।


~আমার জন্য কি সত্যি তুমি কেবল কাজের লোক ছিলে সুলতানা।


চলবে...


No comments