ছায়া হয়ে থাকব পাশে

 ছায়া হয়ে থাকব পাশে

Part ঃ  28+29

 humayra khan


রিয়া ঃ ইউ ব্লাডি হেল....কি করলে এইটা আমার উপরই পুরো চা ফেলে দিলে........

কথাটা  বলার সাথে সাথেই রিয়া চারুর গালে থাপ্পড় মারতে নিলে----

আহান সাথে সাথে রিয়ার হাত টা ধরে  ফেলে......

আহানঃ তোমার সাহস কি করে হয়??  ওর উপর হাত উঠানোর?????

 রিয়াঃ আহান তুমি দেখলেনা  এই ফকিন্নিটা  আমার উপর চা ফেলে দিলো.....

চারু রিয়ার বলা কথা শুনে কান্না করতে করতে চলে যায় সেই খান থেকে.......

আহান চারুকে থামাতে নিলে--

রিয়াঃ ওও আহান বেবি তুমি কোথায় যাচ্ছো....

আহান রিয়ার দিক এ রাগি দৃশটি তে তাকিয়ে কিছু না বলেই ওর গাল এ  কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে বসলো

 থাপ্পড় টা এতো জোড়ে ছিলো যে রিয়া তাল সামলাতে না পেরে ওর মায়ের গা এর উপর পরে...

সাথে সাথে নিজের মেয়েকে সামলে নেয় মায়া-

সাবিনাঃ আহান এইটা কোন ধরনের বেয়াদবি??? 

আহানঃ বেয়াদবি তো  রিয়া করেছে মা চারুর সাথে...

রিয়ার দিক এ আঙুল তুলে -

দিতৃীয় বার ওর উপর হাত তুলার আগে এই থাপ্পড়টার কথা ভেবে নিবে....

কথাটি বলে আহান চলে যায় সেই খান থেকে......

চারুর রুমে গিয়ে ওকে না পেলে---

আহানঃ আমি জানি তুমি কোথায় থাকতে পারো.....

 আহান তাড়াতাড়ি করে ছাদে চলে যায়......

ছাদে উঠে দেখে চারু ছাদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে বাচ্চাদের মতো আওয়াজ করে কান্না করছে........ 

আহান চারুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে......

আহানঃ কি হলো আমার চড়ই পাখি টা এই ভাবে কান্না করছে কেন???  অই রিয়াকে তো উচিৎ শিক্ষা দিয়েছি ওর কৃতকর্মের জন্য.... 

চারু ঃ মানে........

আহানঃ ওকে কষিয়ে একটা চড় মেরে দিয়েছে আমার চড়ই পাখিটার উপর হাত তুলার  সাহস করার জন্য..... 

চারু ঃ আমি সে জন্য কাদছিনা...... আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওই রিয়া বাচ্চা আপনাকে আমার থেকে চুরি করে ফেলবে.... 

আহানঃ চারুর থেকে আহানকে আলাদা করার কারো সাধ্য আছে নাকি.......

চারু ঃ সত্যি তো কখনিই আমাকে একা করে চলে যাবেন না...

আহানঃ হুম সত্যি বাবা....

হঠাৎ কেউ বলে উঠলো ---

 ওওওও তলে তলে এই সব চলছে........

আহান আর চারু পিছনে ঘুরিয়ে দেখে দিশা আর আবির দাঁড়িয়ে আছে,.........

আবির আর দিশা ওদের সামনে এসে----

দিশাঃ ওও ভালোই তলে তলে টেম্পো চালানো হচ্ছিলো......

আহানঃ শুধু টেম্পো না ভাবি  সাইকেল গাড়ি রিকশা ও চালিয়েছি..( হেসে)

চারু তো কিছু বলতেই পারছেনা...লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে আছে........

দিশাঃ কি হলো এখন কেন লজ্জা পাচ্ছো চারু সুন্দরী... 

এতো দিন তো ভালোই আমাদের পিছনে পিছনে জমিয়ে প্রেম করছিলে---

আর আমাদের একটু বলার দরকারই মনে করো নি..

চারু ঃ আসলে ভাবি.....

আবিরঃ  তোর ভাগ্য কত ভালো আহান তোর  কপালে এতো সুন্দর মেয়ে জুটেছে....  আর আমার......

দিশাঃ কি বলতে চান?? আমি সুন্দর না(রেগে)

আবিরঃ হুম সুন্দর তো.. আটা ময়দা সুজি মেখে...

আহানঃ আবারও শুরু করে দিলে দুই জনে মিলে....

আবিরঃ আহান আমার মনে হয় মাকে সব বলে দেওয়া উচিৎ.... 

আহানঃ না ভাইয়া এখন মা রাজি হবেনা....উল্টো চারুর উপর তার ঘৃনা টা আরও বেড়ে যাবে তাই আগে মার মনে চারুর জন্য জায়গা করতে হবে তারপর মাকে আমার আর চারুর কথা বলবো....এই কাজে তোমাকে আর ভাবিকে হেল্প করতে হবে আমার....

আর কাল থেকে আমি কাজে চলে যাব...  তাই চারুকেও দেখে রাখতে হবে আমার অনুপস্থিতে...,

অন্যদিক এ.......

মায়াঃ দেখলে আপু আহান কেমন বদলে গেছে সামান্য একটা মেয়ের জন্য আমার ফুলের মতো মেয়েটির গা এ হাত তুললো.

সাবিনাঃ দাড়া আমি আহানের রুমে গিয়ে ওর সাথে কথা বলছি....

মায়াঃ না থাক আপু এখন ওর সাথে কথা বলতে হবেনা,...  কিন্তু আহানকে অই চাকরানি থেকে দূরে দূরে রেখো.. আজ ওর জন্য মায়া দেখাচ্ছে কাল যদি অই মেয়েটার প্রেমেই পরে যায় তাহলে আমার সব প্লেন বেস্তে যাবে,.......

সাবিনা তার বোনের বলা কথা শুনে অবাক চোখ এ তাকালে....

মায়াঃ মানে আপু আমি চেয়েছিলাম কি আমার রিয়ার সাথে আহানের বিয়েটা দিতে.......তুমি তো জানো..

আমার মেয়ে দেখতেও যেমন সুন্দর তেমনি স্বভাব আচরন চরিএ টাও সুন্দর....... 

সাবিনাঃ আগে আমি আহানের সাথে কথা বলে নেই সুযোগ বুঝে...তাছাড়া আমার বোনের মেয়ে আমার ছেলের বউ হবে এইটাতো খুশির কথা....

কথাটি বলে সাথে সাথে চলে যায় মিসেস সাবিনা.....

ডায়নিং টেবিলে বসে সবাই লাঞ্চ করতে নিলে---

হঠাৎ রিয়া খাবারের মাঝ খান থেকে উঠতে নিলে--

সাবিনাঃ কি রে রিয়া খাবারের মাঝ খান থেকে উঠে যাচ্ছিস কেন????

রিয়া ঃ আসলে খালামনি... বেশি খেলে আমি মোটা হয়ে  যাব তাই..... 

সাবিনাঃ কিন্তু প্লেট এ-র খাবার টা তো শেষ কর.....

মায়াঃ থাক আপু ওকে যেত দাও... ওও এমনি তেও বেশি খেতে পারেনা...

রিয়া তাড়াতাড়ি করে ডায়নিং টেবিল ছেরে চলে যায় নিজের রুমে...

চারু ঃ ভালোই হয়েছে শাকচুন্নি টা গেছে এই খান থেকে......

বিকালে.........

চারু রিয়ার  রুমের পাশ থেকে যেতে নিলে ওর কানে গিটার এর আওয়াজ ভেসে উঠে....... 

কৌতুহল নিয়ে রিয়ার রুমে প্রবেশ করলে দেখে রিয়া গিটার হাতে নিয়ে গান গাইছে......

চারু রিয়ার গান শুনে জোড়ে জোড়ে  হাসতে লাগে..

রিয়া ওর চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে চারু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো হেসে যাচ্ছে....

রিয়াঃ এই মিডেল ক্লাস মেয়ে এই ভাবে হাসছো কেন??

 চারু ঃ এতো ভয়ংকর গান শুনে কার না হাসি পাবে...আনমনে 

চারু ঃ আপু .আসলে আপনার সুর ঠিক হচ্ছেনা....

রিয়া ঃ এই মেয়ে তোমার সাহস কত বড় আমাকে  বলতে এসেছো আমার সুর ঠিক হয়নি...

গানের এ বি সি ডি ও জানো নাকি??? এতো গলা ফাটিয়ে বলছো ...... 

এই নাও গিটার দেখি কত পারো তুমি...

চারু ঃ না আপু আমি গান গাইতে পারব না....

রিয়া ঃ নিশ্চয়ই গান পারেনা তাই না না করছে....

দাড়া দেখাচ্ছি মজা..... আনমনে 

তোমার  মতো ক্ষেত পারবে কিভাবে শুধু তো  কথাই বলতে জানো...

চারু রেগে মেগে রিয়ার হাত থেকে গিটার টা নিয়ে গিটার টা বাজাতে শুরু করলে ওর হাত কাঁপতে থাকে..

হঠাৎ আহান রিয়ার রুমে আসলে বেশ অবাক হয় চারুর হাতে গিটার দেখে---

আহানঃ চারু তুমি গান গাইতে পারো.?.....

রিয়াঃ আরে গান গাইতে পারলে কি গিটার হাতে নিয়ে কাপাকাপি করতো.

হঠাৎ চারু গিটার বাজিয়ে আহানের চোখ এ চোখ রেখে গাইতে শুরু করে--

tu aata  hei seene me..

Jab jab sansein barti hu

Teri dil ki galiyon se 

Mai har Roze gucharti hu

Hawa ke jaise  chalta hai tu

Mai ret jaise udti hu

Kaun tuje u pyar karega jaise mei u karri hu..

Haaaaa aaaa haaaaaaa..... 


আহান চারুর গান শুনে পুরাই শকড...

 রিয়াও মুখ হা করে বসে আছে.........

আহানঃ আল্লাহ তুমি এতো সুন্দর গান পারো....

চারু আহানের কথার কোন উত্তর না দিয়ে চলে আসে রিয়ার রুম থেকে....

চারু এই ভাবে চলে যাওয়ায় আহানও ওর পিছনে পিছনে চলে যায়... 

রিয়া ঃ উফফ কেন যে বলতে গেলাম গান গাইতে..

ভেবেছিলাম ও গান গাইতে না পারলে ওকে ইনসালট করবো বাট কিছুই হলোনা তেমন...(    মুখ গোমড়া করে)

আহান চারুর রুমে এসে দেখে চারু ওর  বিছানায় বসে কান্না করছে.......

আহান চারু পাশে গিয়ে  চারুর চোখ এর পানি গুলো মুছে দিয়ে,----

আহানঃ উফফ আমার চড়ই পাখিটা এতো সুন্দর গান গাইতে পারে আর আমি এখন জানতে পারলাম..

থিস ইস নট ফের...

চারু ঃ জানেন আহান বাবা অনেক সুন্দর গান গাইতে পারতো বাবার থেকেই  শিখা গান গাওয়া টা..

কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর গান গাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি... কারন গান গাওয়ার কথা ভাবলে বাবার কথা খুব বেশি মনে পরে....

আহান চারু কথা শুনে কিছু না বলে  শক্ত করে. নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো  চারুকে......,

আহানঃ তোমার এই টেলেনট  আমি ওয়েস্ট হতে দিব না চারু......(আনমনে) 

 কাল..............

আহান হসপিটালে চলে  যাওয়ার পর থেকে চারু রুমে মধ্যে বসে পায় চারি করছে....

চারু ঃ উফফ কবে রাত হবে আর কবে সে বাসায় ফিরবে।।।।।।।। বাট রাত পর্যন্ত যে আমি অপেক্ষা করতে পারবো না.... 

কিছু একটা ভেবে চারু নিজের রুম থেকে বের হয়ে পরে......

সবার থেকে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হতে নিলে--

সাবিনাঃ কোথায় যাচ্ছিস চারু....?????.

চারু ঃ আসলে কাকিমা........,

দিশাঃ মা আমার প্র‍্য়োজনীয় কিছু জিনিস লাগবে তাই চারুকে বলেছিলাম যেয়ে নিয়ে আসতে....

সাবিনাঃ ওও আচ্ছা...

দিশাঃ চারু তাড়াতাড়ি যাও..... 

চারু ঃ জ্বি ভাবি...  

দিশার দিক  এ তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি করে চলে যায় চারু....

দিশাঃ আমি জানি তুমি কোথায় যাচ্ছো।।।।(আনমনে) 

আহান ওর কেবিনে বসে পেশেন্ট এর সাথে কথা বলছিল 

হঠাৎ কেউ জোড়ে চিৎকার দিয়ে

সারপ্রাইজ..... 

আহান আর পেশেন্ট বেশ অবাক হয়ে পরে...

দরজার সামনে তাকিয়ে দেখে --

চারু.......

আহানঃ চড়ই পাখি তুমি এই খানে,??

আহানের কথা শুনে পেশেন্টটি মুচকি মুচকি হাসতে থাকে.....

পেশেন্ট ঃ আচ্ছা ডাক্তার আহান আমি না হয় একটু পরে  আসি..... 

কথাটি বলে চেয়ার থেকে উঠে পরে মহিলাটি

মহিলাটা যাওয়ার সময় চারুর দিক এ মুচকি হেসে বের হয়ে পরে কেবিন থেকে...... 

আহানঃ তুমি এই খানে???? আমার কথা মনে পরছিলো বুঝি......

চারু আহানের কাছে গিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে.. 

চারু ঃ হুম অনেক বেশি মিস করছিলাম আপনাকে তাই তো ছুটে আসলাম আপনার কাছে....

হঠাৎ কেউ আহানের কেবিনে প্রবেশ করে--

ডাক্তার আহান.....

আহান আর চারু তাড়াতাড়ি সরে  দাড়ায় একের অপরের থেকে... 

আহানঃ ডাক্তার মেহেদী.. কিছু কাজ ছিল..

মেহেদী ঃ হ্যা ছিল তো কিন্তু আমি পরে আসব নে..

ছেলেটি চারু আর আহানের দিক এ একপলক তাকিয়ে চলে যায় কেবিন  থেকে.....

চারু ঃ ইসস কি ভাববে আমাদের এইভাবে দেখে..

আহানঃ যা ভাবার ভাবুক তাতে আমার কি..

চারু ঃ আচ্ছা আমি চলে যাই না হলে বেশি দেরি হলে কাকিমা রাগ করবে..... 

আহানঃ চলো আমি দিয়ে আসি তোমাকে.....

চারু ঃনা আমি চলে যেতে পারবো....

আহানঃ চুপ... আমি নিজে গিয়েই দিয়ে আসবো তো আসব... 

চারু ঃ আচ্ছা চলেন....

তারপর আহান নিজেই গাড়ি করে চারুকে বাসার সামনে এগিয়ে দিয়ে চলে যায় হসপিটালে.....

চারু বাসার কলিং বেল বাজালে দিশা দরজা খুলে দেয়

চারু বাসার মধ্যে ঢুকলে--

 সাবিনা চারুকে দেখে---

সাবিনাঃ কি রে চারু  তুই বলে কি জানি কিনতে গিয়েছিলি দিশার জন্য??? 

চারু ঃ........


চলবে.........

ছায়া হয়ে থাকব পাশে

Part ঃ  29

humayra khan


সাবিনাঃ কি রে চারু তুই না বাহিরে গিয়ে দিশার জন্য কিছু কিনতে গিয়েছিলি???? তো খালি হাতে এলি যে...

চারুঃ আসলে কাকিমা দিশা ভাবি যে লিস্ট টা দিয়েছিল আমি মনের ভুলে আমার রুমেই ফেলে চলে গিয়েছিলাম...(মাথা নিচু করে)........

সাবিনাঃ তোর মন কই থাকে রে??? 

দিশাঃ কই আবার আপনার ছেলের কাছে(ফিশ ফিশ করে)

সাবিনাঃ কিছু বললে দিশা?????(দিশার দিক এ রাগি দৃশটিতে তাকিয়ে)

দিশাঃ মা বলছিলাম অনেক তো বেলা হয়ে গেল সবার খিদে পেয়েছে তাই তাড়াতাড়ি করে খাবারটা বেরে নেই।। এই চারু তুমি এই খানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো চলো আমাকে হেল্প করবে।।।।।।।।।

চারুর হাতটা টেনে তাড়াতাড়ি করে সেই খান থেকে নিয়ে গেল দিশা........

রান্নাঘরে........ 

চারু ঃ থ্যাংকস ভাবি আমাকে বাঁচানোর  জন্য... 

(দিশাকে জড়িয়ে ধরে).....

দিশাঃ এখন কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলো না হলে আমাদের শাশুড়ী মা সাবিনা খান থেকে  এক লাফ দিয়ে রিনা খান হয়ে যাবে.........(হেসে)

চারু ঃ হুম চলো.....

ডায়নিং টেবিলে চারু আর দিশা সবাইকে খাবার বেড়ে 

দিয়ে 

 চারু  চেয়ার টেনে  ডায়নিং টেবিলে বসতে নিলে-

রিয়াঃ হে ইউ কাজের মেয়ে রহিমা.... তুমি কি আমাদের সাথে বসে খাওয়ার সপ্ন দেখছো নাকি????

মিসেস সাবিনা আর মায়া রিয়ার বলা কথা শুনে মুচকি মুচকি হেসে উঠে...... 

তাতে বেশ অপমামিতবোধ করে চারু.....

দিশাঃ এইটা কোন ধরনের বেয়াদবি... রিয়া...চারু আমাদের পরিবারে একজন  সদ্যস্য তাই তুমি ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলতে পারো না....

 মায়াঃ আপু দিশার বিয়ের কতো বছর হলো?? 

 কি দিশা এখনো বাচ্চা নিচ্ছোনা যে??? কোন সম্যসা আছে নাকি..... বেচারা আবির বিয়ের এতো বছর পর ও বাবা ডাক শুনতে পেলো না....

মায়ার বলা কথাগুলো দিশার বুকে তীরের মতো গিয়ে লাগে.....

আর সে সইতে না পেরে ডায়নিং টেবিল থেকে উঠে গিয়ে সোজা চলে যায় নিজের রুমে....

চারু ও দিশার পিছনে পিছনে চলে যায় ওর সাথে.....

সাবিনাঃ আমার মনে হয় তুই একটু  বেশি বলে ফেলেছিস মায়া.......

মায়াঃ আরে আপু বউ দের এই ভাবে মাঝে মাঝে কথা শুনিয়ে ওদের মনে করিয়ে দেওয়া দরকার ওরা ঘরের বউ শাশুড়ী নয়....এই ভাবে কথা শুনিয়ে রাখলেই দিতৃীয় বার কিছু বলার আগে ভেবে নিবে....

তোমাকে তো আগেও বুঝিয়েছি বউদের এই ভাবে টাইট  দিয়ে রাখতে হয়.... না হলে ওরা আমাদের মাথার উপর উঠে নাচতে শুরু করে... 

রিয়া ঃ হ্যা খালামনি মা একদম ঠিক কথা বলেছে

রিয়া আর মায়ার বলা কথা শুনে চুপ করে রয় মিসেস সাবিনা.........

চারু দিশার রুমে গিয়ে দেখে  দিশা ওর কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে....

চারু দিশার দিক এ অবাক হয়ে তাকালে... 

দিশা ওর কানের হেড ফোনটা খুলে---

দিশাঃ কি হলো এই ভাবে অবাক চোখ এ তাকিয়ে আছো কেন আমার দিক এ.......

চারু ঃ তুমি যেই ভাবে ও খান থেকে আসলা আমি তো ভেবেছিলাম.... 

দিশাঃ কি ভেবেছিলে আমি মায়া খালার কথা শুনে রুমে বসে কান্না করবো....

 চারু দিশার বলা কথা শুনে মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়....

দিশাঃ আমাদের সমাজ টাই এমন চারু......

কেউ মা হতে না পারলে মায়া খালার মতো কিছু কিছু মানুষ রা  কেন বাচ্চা হলো না..আহহ রে ছেলে টা এখনো বাবা ডাক শুনতে পারলো না....

এই ধরনের কথা শুনিয়ে অনেক আনন্দ পায়.....

কিন্তু একবার মেয়েটার মনের কষ্ট বুঝার চেষ্টা করেনা। উল্টো তাদের কষ্ট টাকে  আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ এ থাকে.... তাই আমাদের উচিৎ এই সব মানুষ এর কথা কোন ইম্পরট্যান্ট ই না দেওয়া।। 

চারু ঃ হুম ভাবি ঠিক বলেছো....  আর আমার বিশ্বাস আল্লাহ খুব জলদি আমার আপুটার কোলে ছটুসা একটা বেবি পাঠাবে...

 দিশাঃ আমি সেই দিন এর অপেক্ষাই আছি চারু।।।।

চারু দিশার কথা শুনে৷ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে..


 রাতে আহান এর বাসায় ফিরে আসতে অনেক লেট হয়ে যায়...... 

বাসার কলিং বেল বাজালে চারু এসে দরজাটা খুলে দেয়........

চারু আহানকে দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে-

আহানঃ এই করছোটা কি??? কেউ দেখে নিলে তো প্রবলেম হবে... 

চারু ঃ কে দেখবে??? সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে...

কাকিমা একটু মাথা ব্যাথা ছিল তাই সেও ঘুমিয়ে পরেছে।।।  আপনি আসলে আমাকে খাবার বেরে দিতে  বলেছে.......

আহানঃ ওওওও তাহলে তো কোন প্রবলেম নেই...

কথাটি বলে আহান চারুকে শক্ত করে জড়িয়ে  ধরলে -

চারু নিজেকে আহান থেকে ছাড়িয়ে --

চারু ঃ অনেক লেট হয়ে গেছে চলুন খেতে চলুন...

আমার অনেক খিদে পেয়েছে... 

 আহানঃ তুমি খাওনি?????

চারু ঃ না খাইনি... এইবার চলুন....

তারপর চারু আহান  দুই জনেই এক সাথে বসে ডিনার করে নেয়....

 ছাদে দোলনায়  বসে.......

চারু ঃ আহান আমার মনে হয়না কাকিমা আমাকে কখনিই মেনে নিবে...

আহানঃ তাই নাকি বাট আমার তো মনে হয় একদিন মা নিজেই তোমাকে ঘরের বউ বানানোর জন্য পাগল  হয়ে উঠবে...

কথাটি বলে আহান হো হো করে হেসে উঠে..... 

চারু কিছু না বললে আহান চারু দিক এ তাকিয়ে দেখে চারু গভীর ঘুমে.... 

আহানঃ আল্লাহ এই মেয়ে এমন কেন.,এক সেকেন্ড এর মধ্যেই ঘুমিয়ে যেতে পারে......

তারপর আহান চারুকে কোলে তুলে নিয়ে চারুর রুমে গিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।।

চারু কপালে একটা চুমু দিয়ে লাইট টা অফ করে  চলে যায় নিজের রুমে......


সকালে

আহানঃ চারু যাতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে......

সাবিনাঃ কেন আহান ও কেন রেডি হবে??? 

আহানঃ মা চারু অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে......

আর আমি চাই ওর এই টেলেনট টা ওয়েস্ট এ না যায়...

রিয়াঃ আরে আহান একটা গান গাইতে পারলেই কেউ সিংগার হতে পারেনা....( হেসে)

আহানঃ থাপ্পড় টা কি ভুলে গেছো রিয়া....

রিয়া আহানের বলা কথা শুনে রেগে মেগে সেই খান থেকে চলে যায়... নিজের মেয়ের পিছনে পিছনে মায়াও চলে যায় রিয়ার সাথে.....

আহানঃ চারু দাড়িয়ে আছিস কেন??

চারু ঃ হ্যা ভাইয়া যাচ্ছি....

সাবিনাঃ যা ইচ্ছা কর তোরা....

কথাটি বলে  মিসেস সাবিনাও চলে যায় নিজের রুমে......

চারু রেডি হয়ে আসলে আহান চারুকে নিয়ে বের হয়ে পরে...গাড়ি করে....

গাড়ি টা একটা সংগীত একাডেমির সামনে এসে থামলে চারু বেশ ইতস্ততবোধ করে.... 

চারু ঃ প্লিজ আহান আমায় বাসায় দিয়ে আসুন...

আহানঃ বেশি কথা না বলে নামো জলদি করে গাড়ি থেকে......

চারু আহানের থমক খেয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পরলে আহান ও গাড়ি থেকে নেমে চারু হাত ধরে একাডেমিতে  প্রবেশ করে.........

একাডেমিতে প্রবেশ করে দেখে একটা বয়স্ক লোক অনেক গুলা ছেলে মেয়েকে গান শিখাচ্ছে........ 

লোকটি তার গান বন্ধ করে চারু আর আহানের দিক এ তাকালে -----

আহানঃ আসসালামু আলাকুম স্যার... 

লোকটিঃ ওয়ালাইকুম  আসসালাম

আহানঃ স্যার আমি যে কাল এসেছিলাম.....আপনার কাছে.......... 

লোকটিঃ ওওওও হ্যা..  মনে পরেছে....

তো নিয়ে  এসেছো মেয়েটিকে তোমার সাথে করে....

আমি কালই বলেছিলাম তোমায় যদি ভালো গান গাইতে পারে তাহলেই আমার একাডেমিতে নিব...

আহানঃ হ্যা স্যার আমি নিয়ে এসেছি চারুকে....

আর ও অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে.......

চারুর দিক এ লোকটি তাকালে চারু ভয়ে ঢোক গিলে--

লোকটিঃ তো তোমার নাম কি??? 

চারু ঃ চা..চা..

লোকটিঃ এই মেয়ে দেখি নিজের নামটাই বলতে পারছেনা গান কিভাবে গাইবে.....

লোকটির  কথা শুনে বাকি সব ছেলে মেয়েরা হো হো করে হেসে  উঠে....... 

লোকটি ওদের দিক এ রাগি দৃশটিতে তাকালে তাড়াতাড়ি করে হাসি বন্ধ করে নেয় ওরা.....

আহান চারুকে এক সাইডে নিয়ে গিয়ে--

আহানঃ উফফ চারু.. তুমি এতো নার্ভাস কেন হচ্ছো??

চারুঃ আহান প্লিজ আমি পারবনা...

আহানঃ তোমাকে পারতে হবে চারু আমার জন্য... 

আমি চাই আমার চড়ই পাখি লাইফে নিজের পরিচয় বানাক...তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখতে চাই..

প্লিজ তোমার আহানের কথা রাখবেনা????

চারু ঃ হুম রাখব.....

আহানঃ তাহলে চলো সুন্দর করে একটা গান গেয়ে সবার হাসি বন্ধ করে দাও....

তারপর আহান চারু কে লোকটি সামনে নিয়ে গিয়ে--

আহানঃ স্যার ও  এখন পারবে গান গাইতে... 

লোকটিঃ  পারলে তো ভালো...  এই মেয়ে তাড়াতারি গাও আমার এতো সময় নেই তোমার জন্য বসে থাকা...( চিল্লান দিয়ে)।।।

চারু তার ধমক শুনে বেশ ভয় পেয়ে যায়।

নিজের  চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে---গান গাইতে শুরু করে--  


আমারো পরান ও যাহা চায়.......

তুমি তাই........  তুমি তাই.....  গো.....

আমারো পরান ও যাহা  চায়...

তোমায় ছাড়া আর এ জগতে 

মোর কেহ নাই......  কিছু নাই গো  

আমারো পরানও যাহা চায়.........


হঠাৎ সকলের তালি বাজানো শব্দ চারু কানে আসলে চারু ওর চোখ খুলে দেখে সবাই ওর  দিক এ তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে তালি বাজাচ্ছে।। 

লোকটিঃ মা শাহ আল্লাহ... অনেক সুন্দর গেয়েছো মা......

আহানঃ তার মানি ও সিলেক্টেড????? আপনি ওকে গান শিখাবেন???

লোকটিঃ ওকে গান শিখাতে পারা তো আমার সৌভাগ্য এর বিষয়...... 

 লোকটির কথা শুনে আহান সাথে সাথে চারুকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে.............

আহানঃ দেখেছো চারু বলেছিলাম না... তোমার গান শুনে আমার মতো সবাই মুগ্ধ হয়ে যাবে(কান্নার কন্ঠে)

চারু ঃ আহান সবাই দেখছে ছাড়ুন আমায়(আস্তে)

চারুর বলা কথা শুনে হুস আসে আহানের।।  তাড়াতাড়ি করে ও  ছেড়ে দেয় চারুকে.....

আহানঃ সরি....( মাথা নিচু করে)

লোকটিঃ তো আগামী সপ্তাহ থেকে আসতে পারো তোমরা..........

আহানঃ থ্যাংকস স্যার......  

লোকটি আহানের খুশি দেখে মুচকি একটা হাসি দেয়...

একাডেমি  থেকে বের হয়ে আহান চারুকে বাসায় পৌছে দিয়ে সোজা চলে যায় হসপিটালে.....

বাসায় এসে চারু একাডেমিতে ঘটে যাওয়া  সব কিছু খুলে বললে দিশা বেশ খুশি হয় চারুর কথা শুনে......

কিন্তু মায়া সবিনা আর রিয়া চারুর কথা শুনে খুশি না হয়ে বরং রেগে মেগে চলে যায় যে যার রুমে.........

সন্ধাবেলা আহান  চারুকে কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ না হলে 

  আহান বাধ্য হয়ে ল্যান্ড লাইনে ফোন দেয়.....

মিসেস সাবিনা ফোনটা রিসিভ  করলে 

 ফোনে মায়ের কন্ঠ  শুনতে পেলে--

আহানঃ হ্যালো মা......আজ আমি বাসায় আসতে পারব না......জরুরি একটু কাজ আছে হসপিটালে.... 

সাবিনাঃ সে কি???সারা রাত তুই হসপিটালে থাকবি??

আহান...... 

মিসেস সাবিনা বলা কথা শুনে চারু নিজের কাজ রেখে তার দিক এ কৌতুহুল দৃশটিতে তাকায়....

আহানঃ হ্যা মা.....আজ আসতে পারব না বাসায়..

সাবিনাঃ আচ্ছা........ 

কথাটি বলে ফোনটা রেখে  দেয় মিসেস সাবিনা....

সাবিনাঃ ইসস আমার ছেলেটা সারা রাত হসপিটালে থাকলে খাবে কি রাতে..

চারু ঃ কাকিমা আমি গিয়ে তাকে খাবার দিয়ে আসি??

রিয়াঃ এই তুমি কেন যাবে???????খালামনি আমিই গিয়ে আহানকে খাবার দিয়ে আসি........

সাবিনাঃ আচ্ছা রিয়া তুই গিয়ে দিয়ে আয়......

রিয়াঃ আচ্ছা খালামনি আমি তাহলে রেডি হয়ে আসি...

কথাটি বলে সাথে সাথে নিজের রুমে চলে যায় রিয়া রেডি হতে......

চারু  রিয়ার রুমে ঠুকে --

চারু ঃ রিয়া তোমার কষ্ট করে যাওয়ার কি দরকার??

আমি গিয়েই দিয়ে আসি...

রিয়াঃ এই ইউ মিডেল ক্লাস মেয়ে তোমাকে কে বলেছে আমাকে জ্ঞান দিতে?  আমার রুমে থেকে বের হও না হলে আমি নিজেই তোমাকে ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দিব রুম থেকে....

চারুঃ তোকে তোর ভাষাতেই বুঝাতে হবে.(.আনমনে) 

চারু রিয়ার চুল টেনে ধরলে --

রিয়া ঃ এই মেয়ে করছো কি? আমার চুল ছাড়ো বলছি..না হলে কিন্তু আমি চিৎকার দিবো....

চারু রিয়ার কথা শুনে এক হাত দিয়ে রিয়ার মুখ চেপে ধরে... 

চারু ঃআরও চেচামেচি কর??

রিয়া বেশ চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ার কিন্তু কোন ভাবেই পেরে উঠে না চারুর সাথে...

চারু তাড়াতাড়ি করে রিয়াকে ওয়াসরুমে ভিতর এ থাক্কা দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয়.....

রিয়াঃ দরজা খুলো  চারু...

চারু ঃ রিয়া ডায়রিয়া ম্যালেরিয়া তুই এই খানে বসে থাক এই টাই তোর পারফেকট জায়গা...

আর যত পারিস চেচামেচি কর

এই বাসার সব রুম সাউন্ড প্রুফ তাই তোর চেচামেচি বাইরে কারো কান পর্যন্ত পৌছাবে না,......

তারপর চারু রিয়ার রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা বাইরে থেকে লক  করে চলে যায় নিচে.....

চারুঃ কাকিমা.. রিয়া আপু যেতে পারবেনা তার নাকি 

.শরীর ভালো না

সাবিনাঃ তোকে কে বললো??? একটু আগেই তো ভালো ছিল 

চারু ঃ আমি তার রুমে গিয়েছিলাম... তাকে ডাক দিতে।। তখন সে বললো হঠাৎ তার নাকি পেট ব্যথা করছে।।।।  তাই আমাকেই যেতে বলেছে আহান ভাইয়ার কাছে।। খাবার দিয়ে আসতে।।।।।।। 

সাবিনাঃ.......... 


চলবে.......


No comments