সুখী দাম্পত্য, সফল মা-বাবা

 আগে গাছ, তারপর সেই গাছের ফুল, ফল৷ গাছ যতো শক্তিশালী হবে তার ফুল, ফল ততো ভালো হবে৷ দাম্পত্য হলো গাছ, আর আমাদের সন্তানেরা হলো সেই গাছের ফুল, ফুল৷ 



#Great_marriages_make_great_parents

            

               (সুখী দাম্পত্য, সফল মা-বাবা)


স্বামী-স্ত্রীকে যদি আমরা একটি মডেল বা সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করি, সন্তান হবে সেই মডেল বা সিস্টেমের প্রোডাক্ট বা আউটপুট। মডেল বা সিস্টেমটি যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তবে প্রোডাক্ট বা আউটপুটটিও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আম গাছে যেমন  কলা ধরে না, এটাও অনেকটা এমন বিষয়।  

 

চলুন একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক আমরা আমাদের মা-বাবাদের দাম্পত্য জীবন কেমন দেখেছিলাম। আমাদের দেশে আমরা ছোটবেলায় আমাদের মা-বাবাকে একসাথে বসে দু-দণ্ড কথা বলতেও দেখিনি তেমন! যেন তারা শুধুই আমাদের মা-বাবা, তারা মা-বাবা হয়েই জন্মেছিলেন। তাদের নিজেদের আলাদা  বিশেষ কোন পরিচয় নেই, সম্পর্কও নেই। কিন্তু এটা কি আমাদের জন্য ঠিক করেছিলেন তারা?? মা-বাবার দাম্পত্য সম্পর্কের সাথে মা-বাবার প্যারেন্টিং এর সরাসরি একটা গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ আছে বলেই প্যারেন্টিং এক্সপার্টরা বলেন। বাস্তবেও এটাই কিন্তু দেখা যায়। 


ছোটবেলায় আমরা ছেলে-মেয়েরা যখন হাড়ি-পাতিল বা রান্নাবান্না খেলতাম। একেক এলাকায় হয়তো এই খেলার একেক রকম নাম থাকতে পারে। যাই হোক, ওই খেলায় বাজার করতে কিন্তু ছেলেরা যেতো, আর মেয়েরা রান্না করতো। ছেলেরা কেন রান্না করতো না বলুন তো? কারন ছেলেটা দেখে তার বাবা রান্না করেনা, বাজার করে। আর মেয়েটাও রান্না করতো কারন সে দেখে তার মা রান্না করে। অর্থাৎ, আমাদের বাচ্চারা খুব ছোটবেলা থেকেই মা-বাবাকে তাদের মধ্যে বসিয়ে নেয়, মা-বাবার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে ভাবতে শুরু করে। 


মেয়েটা নিজেকে মায়ের জায়গায় ভাবে, আর ছেলেটা নিজেকে বাবার জায়গায় ভাবে। এটা একদিকে যেমন ভালোলাগার, অন্য অনেক দিকে ভয়ের, আতঙ্কেরও। কেন আতঙ্কের? ধরুন, আপনি আপনার পার্টনারের সাথে খুব ঝগড়া করছেন, চিৎকার করছেন, গালাগালি করছেন, একজন অন্যজনকে যাচ্ছে-তাই করে অপমান করছেন এবং এগুলো আপনার সন্তানের সামনেই করছেন। আর ভুলেও ভাববেন না যে আপনার সন্তান এগুলো শিখবেনা, নিজের মধ্যে লালন করবেনা, এগুলো ভুলে যাবে সে! আপনার ভালো দিকগুলো যেমন সে অনুকরণ করবে, এগুলোও করবে। এইজন্যই বলা হয়, সন্তান হলো আয়না। সন্তানের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের দেখার সুযোগ পাই। আর মা-বাবার দাম্পত্য জীবনও আয়নার মতোই সন্তানের জীবনে প্রতিফলিত হয়ে থাকে৷ 


আমাদের মা-বাবারা আমাদের কখনো বুঝতে দেয়না বা দিলেও খুব কম মা-বাবাই সুন্দর দাম্পত্য সন্তানদের দেখাতে পারে। তাতে আমরা হয় দাম্পত্য সম্পর্ক কী, কেমন হয় বা কীভাবে একে সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ করতে হয় এগুলো শিখতেই পারিনা, অথবা অন্যদিকে শিখি স্বামী-স্ত্রী মানেই ঝগড়া করবে, মারামারি করবে, একে অন্যকে অপমান করবে, আবার একসাথেও থাকবে। তাতে করে দুটো জিনিস হয়ঃ


১। দাম্পত্য সম্পর্ক সম্পর্কে ভালো কিছু না জানার কারণে বা নেতিবাচক  দিকগুলো দেখে দেখে বড় হওয়ার কারণে আমরা নিজেরাও কোন না কোন ভাবে নিজের দাম্পত্য জীবনেও একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি  করে থাকি। 


২। দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে ভালো ধারনা না থাকায় আমরা নিজেরা লাইফ পার্টনার নির্বাচনেও ভুল করে থাকি৷ কারন আমরা তো জানিই না, কী কী দেখে বা কোন বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে সঠিক মানুষকে চিনে নিতে হয় নিজের জন্য। তাই আমরা বেশিরভাগ সময়েই ভুল করি, ভুল নিয়েই ভুল মানুষের সাথে হ-জ-ব-র-ল জীবন কাটাই। এমনকি কোন পরিকল্পনা ছাড়াই বাচ্চা জন্ম দিয়ে আরো বেশি এলোমেলো জীবন কাটাই। 


সন্তান হওয়ার পর প্রায় প্রতিটি মানুষের দাম্পত্য জীবনে পরিবর্তন আসে৷ এমন পরিবর্তন আসে যে মাঝেমাঝে ভেবে অবাক হতে হয় যে এই দুটি মানুষ একসাথে কখনো খুব সুন্দর, অন্তরঙ্গ, হাসিখুশি সময় কাটিয়েছিলো। এমনকি একজন আরেকজনকে ভালোবেসে বা খুব যত্নে বা সাপোর্ট দেয়ার জন্য, বা নিরাপদ বোধ করানোর জন্য হলেও জড়িয়ে ধরতে ভুলে যায়, একটা চুমু খেতে পর্যন্ত ভুলে যায়। শুধু তাই নয়, একজন আরেকজনের মুখের দিকে ভালো করে তাকাতেও ভুলে যায়! আসলে সন্তান জন্মানোর পর মা-বাবার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়, অনেক নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসে তাই কিছুটা এলোমেলো হয়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে একটু একটু করে দিনের  পর দিন এভাবে চলতে চলতে সম্পর্কটা একসময়  #কোমায়_চলে_যায়। এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। আমাদের নিজেদের জন্যও, আমাদের সন্তানদের জন্যও। 


আমরা তাহলে কী করতে পারি? কিভাবে মা-বাবা হওয়ার পরও আমাদের নিজেদের সম্পর্কটা ভালো রাখতে পারি এবং সন্তানের সামনে কীভাবে আমাদের সুন্দর সম্পর্ক তুলে ধরতে পারি? 


এক্ষেত্রে কিছু টিপস কাজে লাগানো যেতে পারেঃ 


১। সন্তানের জন্মের পরপরই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সব ঠিক করে নেয়া যেতে পারে কীভাবে কোনটি ম্যানেজ করা হবে, কে কোন কাজটা করবেন। আরো ভালো হয় সন্তান জন্মের আগেই এসব বেসিক বিষয়গুলো স্যাটেল করে নিতে পারলে। আর যারা এখনো করেননি তারা আজই করতে পারেন দরকার মনে করলে৷ একেবারে না করার থেকে একটু দেরি করে করা কম ক্ষতিকর নিঃসন্দেহে। 


২। আপনারা শুধু মা-বাবা নন। আপনারা স্বামী-স্ত্রী, এবং এই সম্পর্কটিই সবার আগে, এই বিষয়ে দুজনে একমত হয়ে সেভাবে আচরণ করতে পারেন। আগে নিজেদের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করবেন, নিজেদের সম্পর্ককে যত্ন করবেন। তারপর মা-বাবা সম্পর্কটিকে। তাতে ভালোকিছু ছাড়া খারাপ কিছুর কোন কারণই থাকবেনা৷ 


৩। সন্তান জন্মের আগে আপনারা কতোটা made for each other couple ছিলেন এটা বড় কথা নয়, বরং সন্তান জন্মের পরেও তা থাকতে পারাই সবচেয়ে জরুরি।  


৪। ঘরের কাজকে দূজনে ভাগ করে নিন। ঘরের কাজকে Family affair হিসেবে সেট করে নিন। বাচ্চাদেরও বয়স উপযোগী কাজ দিয়ে যুক্ত করতে পারেন। যেসব পরিবারে মা-বাবারা ঘরের কাজ ভাগ করে করেন সেইসব বাচ্চারা অনেক বেশি সহযোগী আর ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বড় হয়। আপনার ভবিষ্যত ছেলের বউও আপনাদেরকে অনেক সম্মান করবে নিশ্চিত থাকুন।  


৫। আমাদের দেশের বেশিরভাগ পুরুষেরাই এখনো ঘরের কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন না। কিন্তু বাচ্চা হবার পর বেড়ে যাওয়া কাজ নিয়ে মেয়েরা হিমশিম খায়। কিন্তু অনেকে অভিমান করে হাসব্যান্ডের কাছে সাহায্য চাননা। তাতে কিন্তু আরো ক্ষতি হয়। একে তো নিজের একার উপর অনেক চাপ পড়ে যায় আর অন্যদিকে দিনের পর দিন জমতে থাকা অভিমানের পাহাড় কিন্তু একদিন ধ্বসে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়। তার থেকে বরং যখনই সাহায্য লাগবে চেয়ে নেয়াই ভালো। 


৬। যেকোন ছোট-বড় বিষয়ে আপনার পার্টনারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। নিজে তো করবেনই,  পার্টনারকেও উৎসাহিত করবেন এই বিষয়ে৷ আর খোলামেলা দাম্পত্য সম্পর্কে জটিলতা খুব কম হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একে অন্যকে বুঝতে পারে, জানতে পারে। এটাও একটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। 


৭। সন্তানের সামনে কোন তর্ক,  ঝগড়া করবেন না। এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে যেকোন একজন জায়গা থেকে সরে যাবেন, অথবা একজন আরেকজনকে মনে করিয়ে দিবেন যে বাচ্চারা এখানে আছে। এই বিষয়ে দুজনে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করাই ভালো হবে। 


৮। প্রতিদিন নিজেরা ১৫-২০ মিনিট সময়  একসাথে সোফায় বসে গল্প করতে পারেন। নাহ, বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে নয়। আগেই করবেন, বাচ্চারা জেগে থাকতেই করবেন৷ ওরা সামনে বসে খেলুক। আর যদি একটু বড় বাচ্চা হয় এবং আপনাদের বিরক্ত করতে আসে (যদি সিরিয়াস কিছু না হয়) তাহলে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন যে মাম্মা আর বাবা এখন নিজেরা সময় কাটাচ্ছি, গল্প করছি, তোমার কথা পরে শুনছি৷ প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে  এই প্র‍্যাকটিস টা  করবেন, দেখবেন নিজেদের সম্পর্কটা তো ভালো হয়েছেই, বাচ্চারাও এতে খুব ভালো বোধ করবে৷ এমনও হতে পারে, একদিন আপনারা ভুলে গেলেও বাচ্চারাই আপনাদের এই সময়ের কথা মনে করিয়ে দিবে। একই সাথে তারাও শিখছে কিভাবে সম্পর্ক সুন্দর করতে হয়।


৯। একজন আরেকজনকে প্রশংসা করুন। বিভিন্ন  কাজের প্রশংসা করুন, সন্তানের সামনেই করুন।হাসব্যান্ড বলতে পারেন যে YOU ARE MORE BEAUTIFUL NOW. আবার স্ত্রীও একই কাজ করতে পারেন। নিজেদের মধ্যে সেলফি তুলতে পারেন। ছবি তুলতে পারার বয়সী বাচ্চা থাকলে  কখনো কখনো তাকেও বলতে পারেন আপনাদের  সুন্দর ছবি তুলে দিতে। তাতে বাচ্চারাও এটা বুঝবে আপনারা একজন আরেকজনকে কতোটা গুরুত্ব দেন এবং এপ্রিশিয়েট করেন। তাতে আপনার বাচ্চারা অনেক বেশি নিরাপদ এবং স্বস্তি বোধ করে। সেও আপনাদের কাউকে অপমান বা অশ্রদ্ধা করার মানসিকতা রাখবে না। 


১০। মাঝেমাঝে আপনাদের নিজেদের পছন্দের খাবার রান্না করে  সবাই মিলে একসাথে খেতে পারেন। রান্নার সময় অবশ্যই দুজনে অংশগ্রহণ করবেন এবং বাচ্চারা যেন জানে যে আপনারা আজ আপনাদের পছন্দের খাবার রান্না করছেন। দেখবেন আপনাদের নিজেদের প্রতি নিজেদের গুরুত্ব দেয়া দেখে ওরাও আপনাদেরকে গুরুত্ব দিতে শিখবে। একই সাথে আপনাদের পছন্দ-অপছন্দকে জানতে পারবে।


১১। যেহেতু শুক্রবার আমাদের দেশে সবার সাপ্তাহিক দিন। তাই প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার 'Thursday Night' বলে একটা ছোট্ট পারিবারিক Fun Time এর আয়োজন করতে পারেন। যেখানে আপনারা আর বাচ্চারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দ করবেন। এটা আপনাদের জীবনের, সম্পর্কের অনেক দিক বদলে দিতে পারে। জীবনকে অনেক সুন্দর করতে পারে, আর বাচ্চারাও অনেক সুন্দর এবং আনন্দ নিয়ে বেড়ে উঠবে। এই দিনে কিছু গেইমস,  সবার পছন্দের কিছু হালকা খাবার থাকতে পারে বা আপনি আপনার মতো করে কিছু ঠিক করে নিতে পারেন।


১২। প্রতিদিন ৫ মিনিট হলেও দুজনে হাসুন৷ একান্তে নিজেরা হাসুন। মাঝেমাঝেই কমেডি সিনেমা বা নাটক দেখতে পারেন দুজনে একসাথে। আবার সন্তানের সামনেও হাসুন, তাদের সাথে নিয়ে হাসুন। আপনার সন্তান সবচেয়ে সুখী হয়, সবচেয়ে নিরাপদ বোধ করে যখন সে আপনাদের দুজনকে একসাথে হাসতে দেখে। আর আপনাদের নিজেদের সম্পর্ক তো ভালো হতেই থাকবে এতে করে। দেখবেন জীবনের অনেক স্ট্রেস কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে৷ 


১৩। মাঝেমধ্যে একে অন্যকে উপহার দিতে পারেন। খুব দামী কিছু হতে হবে এমন নয়, উপহার আপনার গাছের একটা ফুলও হতে পারে। এটা খুব ভালো একটা প্র‍্যাকটিস। এতে করে একজনের প্রতি অন্যজনের প্রায়োরিটি বাড়ে৷ কারণ আপনাকে গিফট দেয়া মানে আপনার সঙ্গী আপনাকে নিয়ে ভাবে । সে আপনার পছন্দ-অপছন্দ খেয়াল রাখছে, আপনাকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করছে।


১৪। স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যেই ছাড় দেয়ার মানসিকতা এবং ভালো বোঝাপড়া থাকতে হবে। এই দুটি বিষয় না থাকলে দাম্পত্য জীবন কখনোই সফল হয় না। 


আমরা মা-বাবা হওয়ার আগে যে সম্পর্কে ছিলাম তা কখনো ভুলে যাওয়া যাবেনা, বরং সেই সম্পর্ককেই বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। দম্পতি হিসেবে আমরা যতোটা সফল এবং সঠিক হবো, মা-বাবা হিসেবে আমরা ততোটা সফল এবং সঠিক হতে পারবো। আমাদের বাচ্চারা যখন আমাদের একসাথে ভালো সময়ে দেখে তখন তারা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করে, পৃথিবীটা আরো বেশি সুন্দর হয় তাদের চোখে এবং একই সাথে তারা অনেক বেশি আত্ম-বিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠে। যে পরিবারে মা-বাবার  সম্পর্ক তিক্ত সেই পরিবারের বাচ্চাদের সাধারনত আচরণগত সমস্যা থাকে এবং সেইসব বাচ্চারা সুস্থ্য মানসিকতা নিয়ে বড় হতে পারেনা। এমনকি তারাও  সাধারণত তাদের জীবনে সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনা!! খাওয়া, ঘুম, পড়া, আচরণ, নিয়ম-কানুনের ট্রেইনিং যদি আমরা দিতে পারি তাহলে আমরা কেন সুন্দর দম্পতি হিসেবে আমাদের সন্তানের রোল মডেল হতে পারিনা??!!


#লেখাঃ শারমিন শামুন


No comments