আজ আমার লেখাটা তাদের জন্য যেসব মায়ের সন্তানেরা একেবারেই বা নিয়মমাফিক পড়তে লেখতে চায় না।



 BKash er bonus pete click korun


  ....  


রহমান  এলিন শেখ 

আজ আমার লেখাটা তাদের জন্য যেসব মায়ের সন্তানেরা একেবারেই বা নিয়মমাফিক পড়তে লেখতে চায় না।  এগুলো একান্তই আমার মনের ভাবনা ও কিছু গবেষনা।  যা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি-

১ চিরায়ত ভাবনাঃ ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’-এমন কথা তো সবারই জানা।  কিন্তু ছেলের বয়স ৫ বছর  হয়ে গেলেও একদমই   পড়তে লিখতে চায় না তাদের  কী হবে? পিতা-মাতার এই ভাবনাটাই যথেষ্ট একটা শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট  করতে।


২ অন্যভাবে ভাবে ভাবাঃ তবে আমরা পিতা-মাতারা কখনোই অন্যদিকটা ভাবি না। যে লেখাপড়া না করেও অনেকে অনেক কিছু করেছেন। তার মানে এই না যে, লেখাপড়ার দরকার নেই। বিখ্যাত অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েও লেখাপড়া শেষ না করেই কাজে নেমে পড়েছেন। তাঁদের কাজই আমাদের জীবনের অনেক কিছু বদলে দিয়েছে আর তাঁদেরকে করেছে বিখ্যাত। 

যেমনঃ বিল গেটস, স্টিভ জবস,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সফল স্থপতি  ফ্র্যাংক লয়েড রাইট, আরেক স্থপতি  বাকমিনস্টার ফুলার(৩০টির বেশী বই)।  মজার বিষয় এরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার করেনি। যেখানে অসংখ্য ছাত্র  বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব নাম্বার পেয়ে চাকরী জন্য ঘুরতে দেখি আমরা। 


৩ প্রতিটি শিশু আলাদাঃ মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শিশু যেমন বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আলাদা, তেমনি সব বিষয়ে সবার পারদর্শিতাও এক না। কিন্তু তারপরও প্রায় সব শিশুই জন্ম নেয় অমিত সম্ভাবনা নিয়ে। আপনার ধৈর্যশীল মন, গ্রহণযোগ্যতা আর শিক্ষকতাই পারবে সেই সম্ভাবনার যথাসম্ভব পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে।

৪ আমার সন্তানের জন্য আমি যা করছিঃ আমি পড়ালেখা খুবই পছন্দ করি। দেশ থেকে বিবিএ/এমবিএ করে বিদেশে পিএইচডির উদ্দেশ্যে  এসেছি।  কিন্তু

আমার ৫ বছরের আযান পড়াকু বেবিদের মতো একদমই নয়। সেটা আমি ওকে প্রথম  পড়াতে বসার দিনেই  বুঝতে পেরেছিলাম। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। আশেপাশের আত্মীয় স্বজন সবারই আযানকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা। সবাই বলে মা বাবা এত শিক্ষিত, বাচ্চা  না হয়ে যাবে কই!! কিন্তু বিধি বাম।  মানসিক চাপে ভুগতাম বাচ্চার বাবার সঙ্গে দুঃখের শেষ নেই। তারও শান্তনা ছাড়া আমাকে কিছু দেয়ার ছিল না। 😭


৫ নামাজে বসলামঃ আপনি দেখবেন যখন দুনিয়ার কেউ আপনার ডাকে সাড়া না দিলে  আল্লাহকে ডাকলে ঠিকই সাড়া সাড়া দিবেন। হিন্দিতে একটা বানী আছে  "ভগবানকে (আল্লাহ)  কী ঘর দূর হে  অান্ধের নেহি" -এটা আমি বিশ্বাস করেই জীবনে এতটা পথ চলেছি। এবারই তাই করলাম।  আল্লাহর কাছে এর সমাধান চাইলাম।  ফলাফল স্বরুপ আল্লাহ আমাকে   ধৈর্য দান করলেন।  একটু অন্যভাবে দেখা শুরু করলাম। ধৈর্য ধরে পড়ালেখার আগ্রহ তৈরিতে আযানকে যথেষ্ট সুযোগ ও সময় দিয়ে চলেছি নিয়মিত। 

৬ আমি আযানকে নিয়ে পড়তে বসি নাঃ  কোনদিনই আযানকে নিয়ে পড়তে বসি না। ওকে নিয়ে খেলতে বসি 😉🤣। কানামাছি খেলি, ছোঁয়া-ছুয়ি খেলি এবং বরফ-পানি খেলি  এছাড়া আরো কত খেলা... খেলার শেষ নাই। 


৭ খেলতে খেলতে পড়াঃ খেলা করতে বোরিং হয়ে গেলেই, আমার চান্স আসে। তখন বলি "চলো অন্য কিছু করি"। 

বলতে গেলে ভিন্ন কিছু করার ছলে ওকে খাতা পেন্সিল ধরিয়ে দেই। আযান চ্যালেনজ নিতে পছন্দ করে তাই আমিও কম না, ওরি তো মা।  আমিও চ্যালেনজ ছুড়ে দেই। বলি  "এটা করো তো দেখি পারো কিনা? বা কে আগে পারে আম্মু না তুমি?" এছাড়া কাউন্টিং খেলি আমি ১ বলি ও ২ বলে আমি ৩ বলি এভাবে যতোদূর সম্ভব.....।  আর আযানের বাবা বেশ  চারুকলায় পারদর্শী, তাই বাবা-ছেলে মিলে সৃষ্টিশীল কাজ করে প্রায় প্রতিদিনই। যেমন- কাগজের ফুল না হয় পড়ার কাপড় দিয়ে ১,২,৩ বা ABCD লেখালেখি করা ইত্যাদি। খেলার ছলে পড়া বলতে যা বোঝায়।  আর এছাড়া ইউরোপীয়ান স্কুলগুলোর কার্যক্রমও বিডির মতো না।  তাই আযানের  মেধা বিকাশে বেশ সহায়ক হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।


৮ নামাজঃ সারাদিন কাজ শেষে (বর জব করে আমি আর বাবু ক্লাস করে ) বাসায় ফিরে  আমরা জামাই-বউ জামাত করে নামাজ পড়ি। আমাদের নামাজ দেখ কতখন ও জায়নামাজে খেলে আবার কখনো সেজদাহ দিলে কাঁধ উঠে।  কিন্তু আমরা বকাঝকা করি না। কারন এ যুগের বাচ্চা  এতে বিরূপ প্রভাব বা ধারনা তৈরী হতে পারে। একদিন আযান আমাদের  জিজ্ঞেস করছে আমরা কেন নামাজ পড়ি? আমরা বললাম "নামাজ পড়লে আল্লাহ খাবার দেয় সব কিছু দেয়।" 

একদিন দেখি আমাদের কাছে খেলনা না পেয়ে, আল্লাহর কাছে চাই বায়না করছে। আমরাও এখন বুদ্ধি করে  আযান কিছু আবদার এখন দেই না বলি, আমরা কোথ থেকে দেব? আল্লাহর কাছে চাও।  খুব সুন্দর করে মোনাজাত ধরে আল্লাহর কাছে চায় দেখতে দারুন কিউট লাগে। এখন তো কখনো কখনো দরকার ছাড়া  নিজে থেকে বলে "আমি তোমাদের সঙ্গে নামাজ পড়বো" আলহামদুলিল্লাহ।  


৯ ঘরে কাজে সাহায্যঃ আমি শবজি কাটলে ওকেও কখনো কখনো প্লাসটিকের চাকু ধরিয়ে দিয়ে বলি মা বাবাকে হেল্প করো।  ও শবজি কাটে যে আকার আকৃতিতে শবজী কাটুক না কেন রান্না করে ফেলি। কারন আমার অপচয় একদম পছন্দ না। অপচয় করতে দেখলে একটা জিনিসই মনে পরে, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা যখন খেয়ে দেয়ে ঘুমাই তখন কত মানুষ না খেয়ে শুতে যায় 😪😭। এছাড়া  মাঝে মাঝে ও নিজে ঘর ময়লা করে নিজেই ঝাড়ু দেয়ার চেষ্টা করে আলহামদুলিল্লাহ।  


১০ ফলাফলঃ  ইয়াফির রহমান আয়লান ডাক নাম আযান (ওর প্রতিটি নামের পেছনেও গল্প আছে সে না হয় অন্য একদিন বলবো) স্কুলে প্রথম ১০ জনের মধ্যেই আছে।   

আলহামদুলিল্লাহ এই হলো আমার জান পাখিটার পড়ালেখার অবস্থা।  সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন বড় মানুষ হওয়ার দরকার নেই,  ভালো মনের একজন গুনী মানুষ যেন আল্লাহ ওকে বানায় এটাই চাই। কারন এখন  দুনিয়াতে বড় বড় মানুষ আছে। কিন্তু  ভালো বা সাদা মনের মানুষ নেই বললেই চলে। 😭


এখন আযানের মতো শিশুর মায়েদের জন্য কিছু কথা- 


ব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে সন্তানদের পড়ালেখা আর স্কুলের বাড়ির কাজ (হোমওয়ার্ক) মায়েদের জন্য আলাদা একটা চাপই বটে। তা ছাড়া পড়ালেখার সময় শিশুর চঞ্চলতা, পড়তে বসে দশবার করে উঠে যাওয়া, অমনোযোগিতা, হোমওয়ার্ক না করতে চাওয়া প্রভৃতি যেন সব মায়েরই সাধারণ অভিযোগ।

আবার এমনও দেখা যায় কিছু অতি উদ্বিগ্ন মায়ের জীবনে সন্তানের পড়ালেখা এবং হোমওয়ার্ক তৈরি-ই যেন জীবনের প্রধান ও একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যেকোনো মূল্যেই সন্তানের ভালো ফল, প্রতিটি পরীক্ষায়ই ভালো নম্বরই যেন তাঁদের চাই-ই চাই। আর তাঁদের এই ইচ্ছার মূল্য গিয়ে পড়ে তাঁদেরই প্রিয় সন্তানের সুস্থ মানসিক গঠনে ও বিকাশে। ফলে মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে বুঝতেই পারেন না তাঁদের কারণে ছোট্ট শিশুটি দিন দিন হয়ে উঠছে উদ্বিগ্ন, খিটখিটে, পড়ালেখায় অমনোযোগী।


সাধারণত চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই শিশু পড়ালেখা নামক নতুন একটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়। খুব ধীরে ধীরে সে এ-সম্পর্কিত এক ধরনের নিয়মের মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরিচয় ঘটে বইয়ের সঙ্গে। বইয়ের অক্ষরের সঙ্গে, জ্ঞানের জগতের সঙ্গে। সে কেন পড়ছে, এর উদ্দেশ্য কী, পড়ালেখা করলে তার ভবিষ্যতে কী লাভ হবে বা না করলে কী ক্ষতি হবে—সেটা বোঝার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই পাঁচ-দশ বছরের বাচ্চার থাকে না। ফলে খুব দায়িত্ব নিয়ে সে তার হোমওয়ার্ক করবে বা নিয়মিত পড়ালেখা করবে—এমন আশা করাটা অনুচিত।

 

তাই যা করতে পারেনঃ 

. পড়াশোনা শুরুর প্রথমেই খুব ভালো ফল করতে হবে এমন প্রত্যাশা থেকে সরে এসে বরং শিশুর কাছে বইয়ের প্রতি যেন একটা আগ্রহ তৈরি হয়, সেটার দিকে মনোযোগী হোন।


. পড়ালেখার বা হোমওয়ার্ক প্রথমেই একেবারে ঘড়ি ধরে রুটিনমাফিক না করে শিশুর ইচ্ছে অনুযায়ী দিনের যেকোনো সময় বসান।


. একই সঙ্গে একটানা দীর্ঘক্ষণ শিশুকে জোর করে পড়ার মধ্যে ধরে রাখবেন না। কারণ, এ বয়সের বাচ্চা অনেকক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। পড়ার সময় মাঝেমধ্যে তাকে উঠতে দেওয়ার সুযোগ দিন।


. পড়ালেখার বিষয়টি যথাসম্ভব খেলাচ্ছলে করার চেষ্টা করুন, গল্পের মধ্যে করুন।


. কৈশোরের আগপর্যন্ত সাধারণত মা-বাবাই শিশুর জগতের প্রধান ও মধ্যমণি হিসেবে কাজ করে। তার যে আচরণ বা ব্যবহারের প্রতি আপনি মনোযোগ দেবেন, সেটা আরও বেড়ে যাবে। সুতরাং যখনই আপনার সন্তান বই নিয়ে বসবে বা পড়ালেখা করবে সেটা যতটুকু হোক, সেটার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করুন।


. হোমওয়ার্কের বিষয়টি মাঝেমধ্যে শিশুর নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দিন এবং পরে সারপ্রাইজ করুন। এ ক্ষেত্রে বাচ্চা যতটুকু পারল, (সেটা যত সামান্যই হোক) তার প্রশংসা করুন।


. হোমওয়ার্ক করার সময় শিশুর চঞ্চলতা, এদিক-ওদিক তাকানো, মাঝেমধ্যে উঠে যাওয়া প্রভৃতি স্বাভাবিক। এসব ব্যবহারে বকা না দিয়ে যথাসম্ভব উপেক্ষা করুন, মেনে নিন।


. হোমওয়ার্ক বা পড়ালেখার বিষয়ে ক্রমশ অনীহা দেখালে বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে নিন এবং কেন তার অনীহা তৈরি হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদের সহায়তা নিন।

No comments